নোয়াখালী থেকে পাসপোর্ট করিয়ে তুরস্কে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ৩ রোহিঙ্গা

চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার তিন রোহিঙ্গা যুবক পুলিশকে বলেছেন, তারা দালাল ধরে নোয়াখালী থেকে পাসপোর্ট করিয়েছেন; তুরস্কে যাওয়ার আশায় তারা ঢাকা যাচ্ছিলেন ভিসার আবেদন করতে। 

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্ত, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2019, 02:50 PM
Updated : 12 Sept 2019, 02:44 PM

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সিডিএ ১ নম্বর রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আকবরশাহ থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে মোহাম্মদ ইউসুফ (২৩) ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ মুসার (২০) বাড়ি মিয়ানমারের মংডুর দুমবাইয়ে। আর মোহাম্মদ আজিজ ওরফে আইয়াজ (২১) বাড়ি মংডুর চালিপাড়ায়।

আকবরশাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে আরাকানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কক্সবাজারের উখিয়ায় খাইয়াংখালী হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকছিলেন তারা।

প্রতারণার মামলা দায়ের করে শুক্রবার আদালতে হাজির করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

ওসি বলেন, রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই তিন তরুণকে আটক করার পর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু পাসপোর্টের ঠিকানা নিয়ে তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে।

“এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করে যে তারা রোহিঙ্গা। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে তুরস্কে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে তারা ঢাকায় যাচ্ছিল।”

ওই তিন রোহিঙ্গা তরুণ পুলিশকে বলেছেন, ‘ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হওয়ার পর তারা ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ওই সংগঠন থেকে তাদের বলা হয়, ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিলে তারা ভিসা পাবে, পরে সেখান থেকে ইউরোপে যেতে পারবে।

এরপর টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নুরুল আলম ওরফে এরশাদ নামে এক ‘দালালের’ সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই তিন তরুণ। এরশাদ তাদের পরিচয় করিয়ে দেন চকোরিয়ার পারভেজ নামের আরেক ‘দালালের’ সঙ্গে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গত নভেম্বর মাসে ওই তিনজনকে ফেনীতে নিয়ে যায় পারভেজ। সেখানে তাদের একটি হোটেলে রাখা হয় দুই। পরে তাদের নিযে যাওয়া হয় নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।

“জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিসে কেউ তাদের কাছে কিছু জানতে চায়নি। তারা সেখানে সরাসরি আঙুলের ছাপ দিয়েছে। পরে পারভেজের কাছ থেকে তারা পাসপোর্ট বুঝে পেয়েছে।”

জব্দ করা পাসপোর্টে দেখা যায়, ইউসুফ আর মুসার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর। বাবার নাম আলী আহমেদ। স্থায়ী ঠিকানা লেখা হয়েছে নোয়াখালীর সেনবাগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নজরপুরে।

আজিজের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি। বাবার নাম জামির হোসেন। বাড়ির ঠিকানা লেখা হয়েছে নোয়াখালীর সেনবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিজসেনবাগ।

তাদের সবার পাসপোর্টে জরুরি যোগাযোগের মোবাইল ফোন নম্বর ও জাতীয় সনদপত্রের নম্বরও দেওয়া আছে।

আকবরশাহ থানা পুলিশকে তারা বলেছেন, ইউসুফ ও মুসার পাসপোর্টের জন্য দালালকে ১ লাখ ৫ হাজার এবং ৯০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আর আজিজ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। ওই টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন এরশাদ।

ওসি বলেন, “তারা তিনজনই ভালো ইংরেজি বলতে পারে। দুই ভাই বলেছে, তাদের বাবা মিয়ানমারে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পাসপোর্টে বাবা মায়ের যে নাম দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সঠিক বলে তারা দাবি করেছে। আমরা বিষয়গুলো যাচাই করে দেখছি।”

তিনজনের কাছেই বাংলাদেশি সিমসহ মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে জানিয়ে ওসি বলেন, “কীভাবে তারা তা পেল, তাও আমরা জানার চেষ্টা করছি।”

আরও চার রোহিঙ্গা আটক

কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে আসা চার রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বার্মা কলোনি থেকে তাদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করার পর শুক্রবার সকালে তাদের টেকনাফের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।

আটক চারজন হলেন- মো. আরাফাত (২২), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (১৮), মা ফিরোজা বেগম (৫০) এবং আছিয়া খাতুন নামে ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা।

পরিদর্শক প্রিটন বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে তারা রাতে বার্মা কলোসিতে এসেছিলেন। তাদের দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।”

জিজ্ঞাসাবাদে শুরুতে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিলেও পরে তারা নিজেদের রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করে নেয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ইউএস/জেকে/ 

আরও পড়ুন