রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবে জন্মসনদ-পরিচয়পত্র না পায়: পৌর মেয়রদের মন্ত্রী

মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র না পায় সেই বিষয়ে সারা দেশের পৌর মেয়র-কাউন্সিলরদের সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2019, 12:17 PM
Updated : 15 Sept 2019, 12:17 PM

রোববার রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবনে ‘পৌরসভার মেয়রবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

মেয়রদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন মিয়ানমার থেকে তাদের দেশের রোহিঙ্গাদের ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের নাগরিক নন, তারা মিয়ানমারের নাগরিক। তারা কোনো অধিকার রাখে না এখানকার জন্ম সনদ পাওয়ার এবং এখানকার কোনো আইডেনটিফিকেশন পাওয়ার।”

মানবিক কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছে এবং এই নিয়ে ‘রাজনৈতিক গেইম’ আছে মন্তব্য করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “আমাদের জাতীয় স্বার্থ, মানবতার প্রতি সম্মান, দুইটাই আমরা দেখাব। কিন্তু তা করতে গিয়ে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করা যাবে না।

“সেই কারণে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, মেয়র ও কাউন্সিলর সাহেবরা, জন্ম সনদ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, কোনোভাবেই রোহিঙ্গা কোনো মানুষ যাতে জন্ম সনদ না পায়।”

পৃথিবীর বিভিন্ন ধনাঢ্য দেশে অন্যান্য দেশের নাগরিকরা আশ্রয় নিলেও তাদের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে (রোহিঙ্গা) যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু এই জন্য আমাদের দেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করতে পারি না। এই বিষয়টি আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।”

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশা নির্মূলে পৌর মেয়রদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “এইডিস মশা পুরো জাতির জন্য বড় ধরনের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মশা নির্মূল করার জন্য আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। আমরা সবাই মিলে সম্পৃক্তভাবে যদি কাজ করি তাহলে এই সমস্যা সমাধান করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।”

ঢাকা থেকে বিভিন্ন গ্রাম পর্যন্ত এই মশার বিস্তার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গ্রামেরও অনেক বিল্ডিং আছে, বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি জমা থাকতে পারে। আনাচে-কানাচে পানি জমা হয়ে থাকতে পারে। সেসব জায়গায় যাতে পানি জমে না থাকে সেই দায়িত্বটা আপনারা পালন করবেন।”

প্রতিটি পৌরসভাকে নিজের আয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে চলার আহ্বান জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ট্যাক্স আমাদের আদায় করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যেখানে দুই হাজার ডলার মাথাপিছু আয়, সেখানে পৌরসভা তার কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না তা আমি বিশ্বাস করি না।

“ভোট চাওয়ার সময় জনগণকে বোঝাতে হবে যে, তাদের কাছ থেকে যে কর নেবেন এর মাধ্যমে তাদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেবেন তা নিশ্চিত করতে হবে। আর আমরা মন্ত্রণালয় থেকে যেসব সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।”

উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে আয়ের পথ খুঁজে বের করতে পৌর মেয়রদের আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগেরর সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, “পৌরসভার অন্যতম কাজ হল শহরটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা। পানি নিষ্কাশন, জলাবন্ধতা দূর করণসহ নাগরিকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।”

পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিজস্ব আয় থেকে দেওয়ার বিষয়ে আইনে বলা আছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, “পৌরসভার কর্মচারীরা যখন ঢাকায় আন্দোলন করে তখন আমরা বিব্রত হই। রাজস্ব বৃদ্ধি করে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের চেষ্টা করতে হবে।”

তবে মেয়রদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কিছু পৌরসভার আয় সীমিত, যে কারণে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয় না। এই বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

এ বিষয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “আপনাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা বসব, এরপর সেগুলো নিয়ে কৌশলপত্র তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।”

রাজশাহীর কাটাখালী পৌর মেয়র মো. আব্বাস আলী অভিযোগ করে বলেন, “কিছু কিছু পৌরসভার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একের পর এক প্রকল্প বরাদ্দ হচ্ছে। অন্যদিকে বহু পৌরসভায় কোনো প্রকল্পই নেই। এটা তো গণতান্ত্রিক হচ্ছে না।”

এ বিষয়ে সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, “পৌরসভাগুলোকে এ, বি, সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা আছে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যক্তি মালিকানাধীন যানবাহন থেকে ট্যাক্স নেওয়ার বিষয়ে আইনে থাকলেও তা কার্যকর না। এছাড়া ব্যাটারিচালিত যানবাহন লাইসেন্সের আওতায় নেই, কিন্তু এসব গাড়ি চলছে। কেউ পাঁচতলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ১৩তলা করছে।”

এসব দেখার জন্য পৌরসভার ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পৌরসভাকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হোক।”

সভায় বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির সভাপতি নিলফামারীর পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ পৌরসভার উন্নয়নে ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীয়তপুর পৌর মেয়র মো. রফিকুল ইসলামও সভায় বক্তব্য দেন।