সরকারি চাকরির বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার’ আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
Published : 09 Apr 2018, 06:35 PM
‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলনরতদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক থেকে সোমবার এই সিদ্ধান্ত আসে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে এই সমঝোতা বৈঠক হয়।
সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনার পর আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার রিজিড অবস্থানে নেই। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচক ভাবেই দেখব।”
মন্ত্রী বলেন, “মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সরকার রিভিউ বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। রেজাল্ট কী আসে আমরা সেটা জানিয়ে দেব।… তারা কথা দিয়েছেন, ওই পর্যন্ত তারা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিত রাখবেন।”
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন কোটা সংস্কারের বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হল। এখন পর্যন্ত আমার যে সকল ভাই বোনেরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সকলকে নিশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রোববার রাতে সংঘাত চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ‘শাস্তি পেতে হবে’ বলে সভা শেষে সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। প্রতিবন্ধী এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ। ফলে এর কোনো শ্রেণিতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য।
এই পদ্ধতি সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
তাদের দাবিগুলো হল- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
আন্দোলনরতরা রোববার শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর বিক্ষোভ আর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।
রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভ্যাপক ভাঙচুর করা হয়। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে রাতভর।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সোমবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ওই বিক্ষোভ থেকেই দুপুরে তাদের মুখপাত্র হাসান আল মামুন সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে দশজন তরুণ ও দশজন তরুণী পুলিশের গাড়িতে করে সচিবালয়ে যান বৈঠকে অংশ নিতে। বিকাল সাড়ে ৪টায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই বৈঠক শুরু হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামন মিয়াও বৈঠকে অংশ নেন।
পরে ওবায়দুল কাদের ব্রিফিংয়ে বলেন, দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
“তরুণ সমাজ, যারা আমাদের রাজনীতিতেও অপরিহার্য অংশ, এদের ব্যাপারে আমাদের একটা দুর্বলতা অবশ্যই আছে।কারণ আমরা রাজনীতিটা শুধু নেক্সট ইলেকশনের জন্য করি না, আমরা রাজনীতি করি, উন্নয়ন করি নেক্সট জেনারেশনের জন্য। কাজেই নেক্সট জেনারেশনের সুবিধা-অসুবিধা, তাদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা আমরা বোঝার চেষ্টা করি।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “শেখ হাসিনা তরুণদের যৌক্তিক দাবি কখনও অবহেলা করেন না। সেই কারণে তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন একটা মেসেজ দিতে।… বিদ্যমান যে কোটা পদ্ধতি, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ ব্যাপারে একটা সমাধান খোঁজার কথা আমরা তাদের বলেছি।”
এই আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোববার রাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়ার কথাও কাদের বলেন।
আরও পড়ুন