সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আগামী রোববার থেকে সারাদেশে ‘গণ পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা।
Published : 04 Apr 2018, 12:32 AM
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আগামী ৮ এপ্রিল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে গণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। একইভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হল।”
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল ‘কোটা সংস্কার সচেতনতা সপ্তাহ’ পালন করবেন তারা।
তিনি বলেন, “আমরা সারা দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে দেড় মাস যাবত অহিংস আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনের তীব্রতা শহর থেকে গ্রাম, ছাত্র থেকে সাধারণ মানুষের কানে পৌঁছে গেলেও বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে এখনও পর্যন্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোনো বক্তব্য পাইনি।”
সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিশ্চিতকরণ ও নিয়োগকৃতদের তথ্য প্রেরণ প্রসঙ্গে’ একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
তবে সেটাকে ধোঁয়াশাপূর্ণ ও অস্পষ্ট দাবি করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে তা মেধায় পূরণ করা হবে, কিন্তু গতকাল একটি মন্ত্রণালয় থেকে কোটা বিষয়ক ধোঁয়াশাপূর্ণ ও অস্পষ্ট পরিপত্র জারি করা হয়েছে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোটা শিথিল ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক বলে আমাদের মনে হয়।”
কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলনে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে বিক্ষোভ করেন শত শত শিক্ষার্থী। এরপর ১৪ মার্চ আন্দোলনকারীরা ৫ দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন তিনজন। তাদের ছাড়াতে থানায় গেলে আরো পঞ্চাশ জনকে আটক করে পুলিশ। দিনভর বিক্ষোভ আর উত্তেজনার পর রাতে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
এরপর আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।
তাদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
কোটার বিরোধী ব্যারিস্টার আমীর
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য নির্ধারিত কোটা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানের পরিবর্তে অসম্মান বয়ে আনছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আমীর-উল ইসলাম।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের আয়োজনে ‘আইনের শাসন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা সংবিধানে বলেছিলাম, যারা অধঃপতিত-পিছিয়ে পড়া নাগরিক বা গোষ্ঠী যেমন; আদিবাসী, দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অনগ্রসর, আমরা কোটা দেওয়ার কথা বলেছিলাম।
“কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং তারা তো কখনও পিছিয়ে পড়া মানুষ নন। কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তো সম্মান করা হচ্ছেই না, উল্টো অসম্মান করা হচ্ছে।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ কোটায় সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ।