ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই, গরম যেন আরও বেশি

দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে চুয়াডাঙ্গায় ৪১.১ ডিগ্রিতে উঠেছে। শুক্রবারের আগে সুসংবাদ নেই; ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমার আভাস সেদিন থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 02:03 PM
Updated : 9 May 2023, 02:03 PM

দেশজুড়ে এ দফার তাপপ্রবাহ আবার ফিরিয়ে এনেছে শরীর জ্বালা পোড়া করার মতো অসহনীয় গরম; যা এসময়ের গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রাকেও কোথাও কোথাও ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসে গড় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; সেখানে মঙ্গলবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে অধিকাংশ জায়গায় ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

টানা চার দিনের এবারের তাপপ্রবাহের বিস্তারে পুড়ছে সারাদেশ। মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও।

এরইমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। সাগরে সৃষ্ঠ লঘুচাপ ঘনীভূত হওয়ার মধ্যে এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। কয়দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলার পর থেকেই গরমে ঘরে বাইরে অতিষ্ঠ সবাই।

এদিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ চড়ে ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই হয়েছে। তবে তীব্র গরমের কারণে উত্তাপ অনুভূত হচ্ছে আরও অনেক বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

একদিন আগেই আরেক দফা তাপপ্রবাহের মধ্যে সোমবার তাপমাত্রা আবার বাড়তে বাড়তে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। ওই দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

চলতি মৌসুমে ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আর ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল ঈশ্বরদীতে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, কুমারখালী, খেপুপাড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

Also Read: সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ

Also Read: পারদ ফের ৪১ ডিগ্রিতে, আরও কয়েকদিন বিস্তারের আভাস

Also Read: ডাঙায় তাপপ্রবাহ, সাগরে লঘুচাপ

বিরাজমান এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, বুধবার থেকে হয়ত আর তাপমাত্রা বাড়বে না, তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং পরদিন থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমার আভাস রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে । তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাগরে লঘুচাপের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানিয়েছেন, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সোমবার মধ্যরাতে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে মঙ্গলবার নিম্নচাপে রূপ নেবে।

“নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার পর আরও ঘনীভূত হয়ে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর অবস্থান, গতি-প্রকৃতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কবার্তা জানানো হবে।”

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার বিকালে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র। প্রথম দিকে উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

Also Read: ঘূর্ণিঝড়ে কী করবেন

Also Read: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বাঁধ ভেঙে ডুবল ঘর, ভাসল ঘের

Also Read: বাংলাদেশে প্রাণঘাতী যত ঘূর্ণিঝড়

ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি

সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে নাম হবে মোখা (Mocha), এটা ইয়েমেনের দেওয়া নাম।

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।

তবে সম্ভাব্য সেই ঘূর্ণিঝড় কবে কোন এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হবে।

গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যানদাউস’ ভারতের তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়ে, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।

সাধারণত ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস প্রবণ বাংলাদেশে মূলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।

এসময়ে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে। ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধস ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস থেকে আগেভাগেই সতর্ক করা হয় সবাইকে।

একটি ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রকে বলা হয় ‘চোখ’। ওই ‘চোখ’ এর চারদিকের এলাকার আবহাওয়াই সবচেয়ে বেশি দুর্যোগপূর্ণ থাকে। ওই এলাকাকে বলে ‘চক্ষুপ্রাচীর’।

যে মেঘবলয় কুণ্ডলী হয়ে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় তাকে কুণ্ডলীগত বৃষ্টিবলয় বলা হয়। এগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ডান-চতুর্থাংশে অতি ভারি বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং এমনকি কী টর্নেডোও সৃষ্টি করে থাকে।

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের যেখানে কম মেঘ থাকে, সেখানে অনেক সময় ১০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ঝড়ের ‘চোখ’ দেখা যায়। এ ‘চোখ’ অতিক্রমকালে সাময়িকভাবে অতি হালকা বৃষ্টিপাত ও সামান্য বাতাসসহ আবহাওয়া শান্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে।

বাতাসের গতি

  • ঘূর্ণিঝড় ৬২-৮৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • তীব্র ঘূর্ণিঝড় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • হারিকেনের গতিসম্পন্ন ১১৮-২১৯ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • সুপারসাইত্লোন ২২০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বা এর বেশি

Also Read: ঘূর্ণিঝড়: কোন সংকেতে কী বোঝায়

Also Read: বাংলাদেশে প্রাণঘাতী যত ঘূর্ণিঝড়

Also Read: ঝড়ের প্রস্তুতি: আশ্রয় কেন্দ্র এবারও আগের ৩ গুণ

Also Read: তিন দশকের ঘূর্ণিঝড়