দাতিনাখালী গ্রামের চিংড়ি চাষি আজিজুর রহমানের চোখের সামনেই চুনা নদীর বাঁধ ভেঙে গেল। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের সব কিছু তলিয়ে গেল। ডুবল চলাচলের রাস্তাটিও।
Published : 26 May 2021, 11:38 PM
বেড়িবাঁধ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের এই মৎস্য চাষি।
পাশের আশাশুনি উপজেলার খাজরা গ্রামের কৃষ্ণ ব্যানার্জী বললেন, তার এলাকায় বেড়িবাঁধ যখন জোয়ারের তোড়ে উপচে পড়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছিল, তখন নারী-পুরুষ সবাই মিলে ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
“শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁধের উপর বসে শেষ রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়,” বলেন তিনি।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশ উপকূলে সরাসরি আঘাত না হানলেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙে বাড়ি-ঘর, মাছের ঘের, ফসলি জমি ডুবেছে।
বুধবার দুপুরে ভারতের ওড়িশা উপকূল দিয়ে যখন ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে ওঠে, তখন বাংলাদেশ উপকূলে কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়েছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে বাঁধ নিয়ে অভিযোগই বেশি এসেছে।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, উপকূলবাসী সারাবছর আন্দোলন করলেও কেউ স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
“ফলে মানুষের জানমালের ক্ষতি বারবার যাচ্ছে। যে কোনোভাবেই হোক আশাশুনি উপকূলে যদি টেকসই বেড়িবাঁধ না হয়, তাহলে ভেসে যাবে উপকূলের সাধারণ মানুষ।”
ঝড় মোকাবেলা নিয়ে বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সংবাদ সম্মেলনে বাঁধের প্রসঙ্গটিও আসে।
তিনি বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছি অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত বা পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। যে যে জেলায় বাঁধ ভেঙে গেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।”
এনামুর বলেন, এখন যে বাঁধগুলো আছে সেগুলো ষাটের দশকের। এগুলো সংস্কার করলে খুব একটা লাভ হবে না।
“আমি নিজেও ভিজিট করে দেখেছি, বাঁধগুলো সরু হতে হতে জমির আইলের (আল) মতো হয়ে গেছে। তাছাড়া বেশিরভাগই হচ্ছে মাটির বাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে দুর্যোগ বেড়েছে, মাটির বাঁধ দিয়ে তা রক্ষা করা যাবে না।”
নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় উপকূল রক্ষায় একটা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
উপকূলবাসী বলছেন, এবার জোয়ারের পানি যতটা বেড়েছিল, এমনটা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়ও দেখেননি তারা।
জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর হাতিয়া এবং ঝালকাঠির রাজাপুরে দুটি শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দুপুরে জোয়ারের পর পূর্ণিমা তিথিতে তেজকটালে রাতে আবারও জোয়ারের আশঙ্কায় দিন কাটছিল উপকূলবাসীর।
ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, দুপুরে জোয়ারের সময় নদীতে পানি ৫/৬ ফুট বেড়ে গিয়েছিল। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী ইউনিয়ন এবং আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, প্রতাপনগরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে।
একই সময় থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা ও দেবহাটা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী, কালিন্দি নদী ও কাকশিয়ালি নদীর পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে।
খুলনা: কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছায় বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বসতঘর, মাছের ঘেরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির জানান, দুপুরের জোয়ারে প্রায় ৪ পর্যন্ত ফুট পানি বেড়েছিল।
“জোয়ারের এত পানি আগে কখনও দেখিনি, আম্পানের সময়ের চেয়েও নদীতে পানি বেশি। রাতের জোয়ার নিয়ে মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।”
কয়রার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি আবু সাঈদ খান বলেন, দুপুরের জোয়ারে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। রাতের জোয়ার নিয়ে এলাকার হাজারো মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়া মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়ায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধের প্রায় ১০ স্থান ভেঙে লোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। মঠবাড়ি বেড়িবাঁধ উপচেও লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
“বার বার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেও টেকসই বাঁধ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কখনও কখনও দায়সারা কাজ হয়েছে,” বলেন সাঈদ।
মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, দশালিয়ায় বেড়িবাঁধ ১০টি স্থানে প্রায় ১০০ হাত জায়গায় প্রবল জোয়ারের পানিতে ভেঙে গেছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেশ বিশ্বাস বলেন, উপজেলার অন্তত দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে এবং অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধউপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
জোয়ারের পানি সরে গেলে স্থানীয়দের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুল রহমান বলেন, “কয়রার ১৪টি স্পট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর কয়েকটি অস্বাভাবিক পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। আমরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। আমরা ৩০ হাজার জিও ব্যাগ মজুত রেখেছি যেগুলো ওভারফ্লো প্রতিরোধে কাজে লাগানো হবে।”
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, সোলাদানা, গড়ইখালী, রাড়ুলী, কোপিলমুনি, লতা, দেলুটি এই ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বাঁধউপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। কিছু স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। সেখানে মেরামতে কাজ চলছে।
দাকোপ উপজেলার কামনীবাসিয়া, পানখালী ও মেরিন কোম্পানির আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রণজিৎ কুমার মণ্ডল ।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, সাধারণত বেড়িবাঁধগুলো ৪ মিটার পানির উচ্চতা ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম। খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে পানির স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৩ মিটারের কাছাকাছি। ঝড়ের সঙ্গে পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি দুই ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উঁচু জোয়ারে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের প্রায় পুরো এলাকা। তলিয়ে গেছে পাঁচটি মিঠাপানির পুকুর।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বনে অবস্থান করা বনকর্মী, জেলে-বাওয়ালি, মৌয়াল ছাড়াও এসব পুকুরের পানি পান করে বাঘ-হরিণসহ বন্য প্রাণীরা।
“অসহায় অবস্থায় পড়েছে বন্যপ্রাণীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেটিসহ বনকর্মীদের আবাসস্থল ও অফিস,” বলেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে জোয়ারের সময় সুন্দবনের দুবলা জেলে টহল ফাঁড়ির ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় কিছু হরিণ। বুধবার দুপুরেও দুবলা ফাঁড়ির পুকুরের পাড়ে কিছু হরিণ ও এর বাচ্চাদের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
পটুয়াখালী: স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতা নিয়ে পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে কয়েকশ মাছের ঘের ভাসিয়ে নিয়েছে, ডুবিয়ে দিয়েছে শত শত ঘর ও ক্ষেতের ফসল।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, “স্থানীয়রা বলছে, এই এলাকায় এরকম পানি আর কখনও হয়নি।”
জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পানিতে প্লাবিত হয়ে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন দুর্গতদের খোঁজ-খবর রাখছে এবং তাদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ দেবনাথ জানান, জেলার দুই শতাধিক গ্রামের প্রায় সবগুলো প্লাবিত হয়েছে। তবে কলাপাড়া উপজেলার ৭৬টি গ্রাম, রাঙ্গাবালীর ৩৮টি, বাউফলের ২০টি ও দশমিনা উপজেলার ১২টি গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।
“ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে জেলায় অন্তত দুই শত গ্রাম তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করতে এখনও সময় লাগবে,” বলেন তিনি।
পানিতে ৫৯০টি মাছের ঘের, দুই হাজার ৬৩২টি পুকুর তলিয়ে গেছে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহ জানান।
এসব ঘের ও পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় ৪৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী জানান, পটুয়াখালী ও কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১০টি স্লুইস গেইট আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাগেরহাট: জোয়ারের পানিতে জেলার নদী তীরবর্তী তিন শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। তবে কোনো বাঁধ ভাঙেনি বলে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানান।
তিনি বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে বগী, তেড়াবেকা, খুড়িয়াখালী, সোনাতলা গ্রাম ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার দোনা, শ্রেণিখালি, নিশানবাড়িয়া ও ছোলমবাড়িয়া গ্রামের তিন শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। ভাটার সময় এই পানি নেমে যাওয়ার কথা।
“কোথাও বেড়িবাঁধ ভাঙেনি। বাঁধ উপচে ও স্লুইচ গেটে দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে সদর উপজেলায় কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।”
বাগেরহাট জেলায় ৬৭ হাজার মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ৩৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
মাছের ঘের সবচেয়ে বেশি ভেসেছে রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলাতে। রামপালে ৯১৭টি, মোংলায় ৬৮৫টি, মোরেলগঞ্জে ১২৫টি এবং শরণখোলা উপজেলায় ১৪৪টি মাছের ঘের ভেসে গেছে বলে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) এ এস এম রাসেল জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুই হাজার ৯১টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে চাষিদের এক কোটি ৫৩ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
পূর্ণিমা তিথি ও ভরাকাটালের কারণে বুধবার রাতে আবার বড় জোয়ারের আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।
বাগেরহাটের ডিসি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানিতে সাধারণ মানুষের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তার খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে।
ঝালকাঠি: রাজাপুরে জোয়ারের পানিতে ডুবে ৮ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মেডিকেল মোড় সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সিয়াম হোসেন নামে শিশুটি পংড়ি গ্রামের মো. ফারুক হাওলাদারের ছেলে।
রাজাপুর থানার ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বরিশাল: জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুপুরের পর নদীর পানি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় নগরীর পলাশপুর, রসুলপুর , বেলতলা, বৌবাজার, মোহাম্মাদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েকশ পরিবার।
নোয়াখালী: দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর উপকূলে অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের তথ্য অনুযায়ী, নিঝুম দ্বীপ, চর ঈশ্বর, সুখচর, সোনাদিয়া, জাহাজমারা, নলচিরা, হরনী, চানন্দি ও তমরদ্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেশি উচ্চতায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।
সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “দুপুরের দিকে জোয়ারের তীব্রতা খুবই বেশি ছিল। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় থেকে সাত ফুট বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে গেছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।”
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় দুপুরের দিকে শুরু হওয়া জোয়ারের পানিতে দ্বীপের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় বেশকিছু কাঁচা ঘর ধসে পড়ে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিপিসির সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হাতিয়ায় সুখচর ইউনিয়নের চর আমানউল্লা গ্রামে জোয়ারের পানিতে লিমা নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু ভেসে গেছে। সে স্থানীয় যোবায়ের হোসেন জগলুর মেয়ে।
হাতিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, মেঘনা নদীর পাশেই লিমাদের বাড়ি। বিকালে ভাটার সময় বেড়ি বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানির স্রোতে সে নিমেষেই হারিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহল টিম রাত ১১টা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পায়নি।
সহায়তা
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মানুষের সহায়তায় সাড়ে ১৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে যেসব মৎস্য ও কৃষিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মৎস্যজীবী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
যাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা]