দুর্ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে বিআরটি কর্তৃপক্ষ সতর্ক বলেও জানান তিনি।
Published : 26 Aug 2022, 11:06 PM
বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদার কখনই তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করেনি অভিযোগ করে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেছেন, এমনকি আগে তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সেটি ‘পালন করেনি’।
শুক্রবার চলমান ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত ১৫ অগাস্ট রাজধানীর উত্তরায় এ প্রকল্পের একটি গার্ডারের চাপায় প্রাইভেটকারে থাকা পাঁচজন নিহত হলে এ প্রকল্প আবার আলোচনায় আসে। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম দিয়ে কাজ করায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে।
শুক্রবার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। ঢাকা বিআরটি কোম্পানির এমডি সফিকুল, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠানসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বিআরটির পরিচালনা সদস্যরা পরির্দশন দলে ছিলেন।
এসময় গাজীপুরে কোম্পানির এমডি সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে বিআরটি কর্তৃপক্ষ সতর্ক। তারা আশা করছেন আর দুর্ঘটনা ঘটবে না।
“একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের পর্যায় পর্যন্ত, আমরা সবাই এখন খুব সিরিয়াস। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদল চীন থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। তারা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,” বলেন তিনি।
এখন ঠিকাদারের কাছে বিআরটি কর্তৃপক্ষের ‘তিনটি চাওয়া’ জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের (ঠিকাদারের) তহবিলের ঘাটতি, লোকবলের ঘাটতি আছে তা পূরণ করতে হবে। আর নিরাপত্তার ঘাটতি আছে শতভাগ পূরণ করতে হবে।
“তারা সব বিষয়ে একমত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে আমাদের সব কাজ অফিসিয়ালি স্থগিত আছে। যেসব পয়েন্টে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, সেখানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিলে আবার কাজ শুরু হবে। এর জন্য ১০ বা ১৫ দিন লাগুক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ‘আর্থিক অসঙ্গতি’সহ কিছু সমস্যা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে কাজটি ঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি। তবে গার্ডার দুর্ঘটনার পর ঠিকাদারকে ‘একটু চাপ’ দেওয়ায় কাজের অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, “তাদের আর্থিক অসঙ্গতি ছিল। ফলে কখনই তাদের কাছ থেকে আমরা হান্ড্রেড পার্সেন্ট পারফরর্মেন্স পাইনি। এ ঘটনার পরে আমরা তাদের একটু চেপে ধরেছি। তারাও কাজকর্মে অগ্রগতি ঘটাচ্ছে।”
তিনি বলেন, এই চাপটা অব্যাহত রাখতে পারলে প্রকল্পের কাজের গতি দ্বিগুণও বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব।
“কিন্তু তারা কমিটমেন্ট দিয়ে বসে কিন্তু বাস্তবে সেটা পালন করে না। এবারও যদি সেটা ঘটে; কিন্তু আমরা আশা করছি এবার সেরকম কিছু হবে না। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমরা সবাই খুব সিরিয়াস। আমাদের যেটুকু কাজ বাকি আছে এবং ঠিকাদারদের কাজ করার যে সক্ষমতা তা যদি শতভাগ কাজে লাগাতে পারি তাহলে সম্ভব।”
এসময় সফিকুল জানান, সাড়ে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের বিআরটি প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরমধ্যে সওজের অধীনে ১৬ কিলোমিটারের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের গেঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) কাজ এগিয়েছে ৮২ দশমিক ০৯ শতাংশ।
অপরদিকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে সাড়ে চার কিলোমিটারের উড়াল সড়ক অংশের ঠিকাদার জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭২ দশমিক ৩৫ ভাগ।