নবম ও দশম শ্রেণিতে উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান আবশ্যিক রেখে অন্যান্য বিষয় ঐচ্ছিক করে দেওয়া হবে পরবর্তী লক্ষ্য, বলেন তিনি।
Published : 01 Jan 2025, 10:32 PM
ক্ষমতার পালাবদলের ফেরে এক বছরের মাথায় মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ বিভাজন ফিরে আসার পর তা আবার উঠিয়ে দেওয়ার কথা আলোচনায় এনেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি নিজে নবম শ্রেণিতে মানবিক, ব্যবসা ও বিজ্ঞান বিভাজন রাখার বিরোধী হলেও বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়া সমালোচনা সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নবম ও দশম শ্রেণিতে উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান আবশ্যিক রেখে অন্যান্য বিষয় ঐচ্ছিক করে দেওয়া হবে পরবর্তী লক্ষ্য।
“এতে মানবিক শাখায় যে আছে, সেও ইচ্ছা করলে বিজ্ঞান নিতে পারে যাতে ভবিষ্যতে সে যেকোনো কিছু হতে পারবে।”
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বছরে প্রথম দিনে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও এর অর্থ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সাল থেকে বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দিয়ে নবম শ্রেণিতে ওই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওই শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে তুমুল সমালোচনা ছিল, যার একটি অংশ বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে।
ওই শিক্ষাক্রমে পাঠদান চলার মধ্যে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তিন দিন পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পরে ১ সেপ্টেম্বর নতুন শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়ন যোগ্য’ নয় বলে ঘোষণা দিয়ে বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনার বার্তা দেয় সিদ্ধান্ত জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করা হয়। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে বিভাগ-বিভাজন ফিরেছে। বিভাজন ছাড়া যেসব শিক্ষার্থী সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে পড়েছিলেন তারাও নতুন বছরে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে বিভাজিত হয়ে দশম শ্রেণিতে পড়বেন।
বুধবার ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ওই পাঠ্যক্রমে (নতুন শিক্ষাক্রমে) অনেক গুরুতর সমস্যা ছিল বলে তার মনে হয়েছে। সেটি হল নবম ও দশম শ্রেণিতে শুধু সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান পড়ানো হবে, উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান পড়ানোর কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। নবম শ্রেণি থেকে উচ্চতর গণিত না পড়ালে উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত নেওয়া যেত না। তাতে অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হত।
“এই শিক্ষাক্রম থেকে আগের শিক্ষাক্রমে যাওয়াকে বলা হচ্ছে পশ্চাৎপথে যাচ্ছি কেন? যাচ্ছিলাম বলেই আমি পেছনে ফিরে গেছি।
“এখান থেকে আমরা নতুন করে শুরু করব, এখন তো আর সময় পাওয়া গেল না। তাই কিছু পরিমার্জন করা হল। কিন্তু অনেক বিষয়েই আমরা এমনভাবে বইগুলো আরও পরিমার্জন করব যেন ধারাবাহিকতার কোনো সমস্যা না হয়। এবার নবম শ্রেণিতে কিছু হল।”
বিভাগ-বিভাজন ফের উঠিয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “নবম ও দশম শ্রেণিতে আমরা উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান রাখছি, কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয়, এবার তো পারলাম না; কিছু বিষয় কম্পোলসারি রেখে, অনেকগুলো বিষয়, যেগুলোকে আমরা বিজ্ঞান শাখা বলছি, মানবিক শাখা বা বাণিজ্যিক শাখা বলছি; এ শাখাগুলোকে তুলে দেওয়া যায়।
“যাতে করে মানবিক শাখায় যে আছে, সেও ইচ্ছা করলে বিজ্ঞান নিতে পারে যাতে ভবিষ্যতে সে যেকোনো কিছু হতে পারবে। হ্যাঁ, এটাও একটা সমালোচনা হবে।”
তিনি নিজে নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজনের বিরোধী হিসেবে তুলে ধরে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “আগে থেকেই নবম শ্রেণিতেই ভাগ করা; আমিও এটার বিরোধী। কিন্তু এটি করা গেল না, এতগুলো বিষয় আছে এগুলো সবকে ঐচ্ছিক করে দিলে রুটিনে সমস্যা হবে আরা আমাদের স্কুল ঘরের সংকট হবে এই কারণে।
“আগামীকে এটি সম্ভব; যে ব্যবসার বইগুলো আরও কম করে দেওয়া যাবে। বিজ্ঞানের চারটা-পাঁচটা বইয়ের বদলে আরও দুটো বই করে দেওয়া যাবে। তবে উচ্চতর গণিত রাখতেই হবে, এটি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বিষয়গুলো আরও কমিয়ে নিতে পারলে বিজ্ঞান গণিতও পড়া হবে, কিছুটা বাণিজ্যও পড়া হবে। এটি আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। কিন্তু এ সবগুলোতেই যেন ধারাবাহিকতা নষ্ট না হয়।”
আরও পড়ুন
মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন ফিরছে নতুন বছরে
শিক্ষা: এবার ইতিহাস মেরামত, পদ্ধতিতে 'সংস্কার' আগামীতে
নতুন শিক্ষাক্রম: বছর শেষে কী বলছে শিক্ষার্থীরা
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক কেন?
আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব: শিক্ষা উপদেষ্টা
নতুন শিক্ষাক্রম: জিপিএ যুগের অবসান, মূল্যায়ন ৭ স্কেলে