'তবে বছর জুড়ে কেমন ছিল নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান প্রক্রিয়া? এ নিয়ে বাগেরহাটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।'
Published : 31 Dec 2023, 05:51 PM
কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি যুক্ত হবে নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজবও ডাল পালা মেলেছে।
তবে বছর জুড়ে কেমন ছিল নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান প্রক্রিয়া? এ নিয়ে বাগেরহাটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছে জানিয়ে একজন শিক্ষার্থী হ্যালোকে বলে, "নতুন শিক্ষাক্রম ভালোই লেগেছে। আগে যেখানে আমরা স্কুলে পরীক্ষা দিতাম, এই পরীক্ষা বিষয়টা থেকে আমরা রিলিফ হয়েছি বলতে গেলে। আগে স্কুলে পরীক্ষা দিতে গেলে টেনশন কাজ করত। খারাপ রেজাল্ট হলে বন্ধুদের কাছে ছোট হতে হতো। এই টেনশন থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি।"
নতুন শিক্ষাক্রম মুখস্ত নির্ভরতা কমিয়েছে বলে মনে করছে আরেক শিক্ষার্থী। সে জানায়, "আগে আমাদের একটা বিষয় ছিল যে, আমরা একটা জিনিস মুখস্ত করে পড়েছি এরপর সেটা পরীক্ষার খাতায় লিখেছি। তারপর সেটা হয়তো আমাদের আর মনে থাকত না। কিন্তু এখন যে ব্যাপারটা, আমরা হাতে কলমে শিখছি। যেটা আমরা ভুলে যাচ্ছি না। এটা একটা চমৎকার ব্যাপার।"
দলগত কাজসহ এক বছরে নতুন শিক্ষাক্রম থেকে আরও অনেক কিছু শিখেছে জানিয়েছে আরেকজন শিক্ষার্থী। সে বলে, "আগে আমি দলগত কাজ ভালো ভাবে করতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমি দলগত কাজ ভালো ভাবে করতে পারি। কে কোন কাজটা নিবে তা ভালো ভাবে ভাগ করতে পারি। এখন আমি পোস্টার তৈরি করতে পারি এবং তা উপস্থাপন করতে পারি। আগে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে আমার মধ্যে জড়তা কাজ করতো।"
শিক্ষার্থীদের কথায় ‘আনন্দের মধ্যে পাঠদানের’ বিষয়টি বেশি প্রকাশ পেয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানালেও কিছু বিষয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
নতুন শিক্ষাক্রম সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ হলেও, এটি প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে চালু করা উচিত বলে মনে করছেন এক অভিভাবক। তিনি বলেন, "হঠাৎ করে ক্লাস সিক্সের শিক্ষার্থীকে নতুন কারিকুলাম দিলে, আমাদের তা মানাতে সমস্যা হচ্ছে। এটি একদম প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে শিশুদের উপর প্রয়োগ করা উচিত ছিল।"
নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য সবাইকে বোঝার প্রয়োজন বলে মনে করছেন আরেকজন অভিভাবক। এই অভিভাবক হ্যালোকে বলেন, "নতুন শিক্ষাক্রমের মিশন ও ভিশন আগে জাতিকে বোঝানো দরকার। আমরা আগে মোটিভেটেড হব, দেন আমরা বাচ্চাদের মোটিভেটেড করব।"
নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের বাস্তব ও প্রয়োগিক জ্ঞানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মনে করছেন বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাবুদ্দিন আহমেদ আকাশ। তবে নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করাতে শিক্ষকদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, "নতুন শিক্ষক্রম শিক্ষার্থীদের শুধু ঘরে বসে বইয়ের পোকা বানানো নয়, বাস্তব জীবনে শিক্ষার্থীরা যে সমস্যাগুলো থাকে সেগুলো হাতে কলমে শিখবে।"
এর আগে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সামনে রেখে তথ্য-প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার প্রসারে ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিল সরকার। সে সময় সৃজনশীল পদ্ধতি, পিইসি ও জেডিসি পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: বাগেরহাট।