যাত্রীরা গাড়ি ছেড়ে মেট্রোরেলে ঝোঁকার পর কেবল মিরপুর নয়, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগেও যানজট কমেছে।
Published : 29 Jan 2024, 12:56 AM
একেকটি কর্মদিবসে মেট্রোরেল ব্যবহার করছে আড়াই লাখের মত মানুষ, যারা এর আগে বাস, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বা অন্য বাহনে চলতেন। তারা সেসব বাহনে চাপেন না বলে চাপ অনেকটা কমেছে সড়কে।
ফলে মেট্রো ছাড়া অন্য বাহনে ফার্মগেট হয়ে মিরপুরে যাতায়াতও আগের চেয়ে মসৃণ হয়েছে। দিনের বেশিরভাগ সময় মোটামুটি নির্বিঘ্নেই চলাচল করা যাচ্ছে।
তীব্র যানজটে ভোগা নগরীতে কোনো ‘টোটকা’ যখন কাজ করছিল না, তখন আসল ভেলকিটা দেখিয়েছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়ক চিত্র পাল্টে যাওয়ার পর এখন অন্য রুটগুলো কবে চালু হবে, সেই অপেক্ষায় নগরবাসী।
মেট্রোরেলের প্রথম রুটটি চালু হয়েছে তিন ধাপে। ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া রুটটিকে কয়েক মাস ছিল পিকনিকের আমেজ।
গত নভেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটটি চালু হলেও তা চলছিল বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত। ফলে পুরো সুফল মিলছিল না। তবে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে সকাল ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই পাল্টে যায় পুরো চিত্র।
সেদিন থেকে মিরপুরের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সড়কের বদলে রেলে ঝুঁকেছে। আর মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটে বাসগুলো দিনের বেশিরভাগ সময় ভুগছে যাত্রীর অভাবে। অটোরিকশার চাহিদাও গেছে কমে। বাইকাররা যাত্রী পাচ্ছেন না বললেই চলে। এই রুটের বাসগুলো অন্য রুটে চালানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে।
মিরপুর থেকে মতিঝিলের পথে যাতায়াতের যন্ত্রণা দূর হওয়ার পর মিরপুরে বাড়ি ভাড়ার চাহিদা বেড়ে গেছে, ফলে লাফ দিয়েছে ভাড়ায়।
১০ মিনিট পর পর ছুটে আসা ট্রেনে চাপতে পারলে মিরপুর থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব এখন কেবল ১০ মিনিটের, মতিঝিলের দূরত্ব ২০ মিনিটের। অথচ কর্মদিবসে এতদিন বাসে বা প্রাইভেটকারে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে কাজীপাড়ায় সময়মত পৌঁছানোর নিশ্চয়তাও দেওয়া যেত না।
ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণের পর প্রশ্ন উঠেছিল এই ভাড়ায় যাত্রীরা আগ্রহী হবে কি না। সেই ট্রেনেই এখন উপচে পড়া ভিড়।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ১০০ টাকা। পল্লবী থেকে তা ৮০ টাকা, মিরপুর-১১ থেকে ৭০, মিরপুর-১০ থেকে ৬০ টাকা।
মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা ও কারওয়ান বাজারে ৪০, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ টাকায় যাত্রীর অভাব নেই, বরং অফিস সময়ে ট্রেনে জায়গা পাওয়াই এখন দুষ্কর।
যাত্রা শেষ করে যাত্রীরা তাদের চলাচলে যানজটের দুর্ভোগের অতীত স্মরণ করছে। সেই সঙ্গে এই অবস্থায় প্রতি ১০ মিনিটে একটির বদলে তুটি ট্রেন দেওয়ার দাবি উঠেছে।
তিন দিন সড়কে চোখ
মিরপুরের যাত্রীরা সড়কের ব্যবহার কমিয়ে ট্রেনে ঝোঁকার পর সড়কের অবস্থা কেমন? মিরপুর-১০, আগারগাঁও, মনিপুরী পাড়া, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর এবং শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা গত সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সড়কে গাড়ির চাপ যে কম, সেটি খালি চোখেই বোঝা যায়। যাত্রী, ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন শ্রমিক- সব পক্ষই সাক্ষ্যও দিচ্ছেন সে কথা।
মিরপুরের পথে গাড়ির চাপ কম থাকায় অন্য সড়কগুলোর গাড়িও তুলনামূলক দ্রুত চলতে পারছে। ফলে মিরপুরের পথের মেট্রোরেলের সুবিধা চুঁইয়ে অন্য সড়কের যাত্রীরাও পাচ্ছে কিছুটা।
বুধবার মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়ক দিয়ে আসার পথেও অনেকটা ফাঁকা রাস্তা দেখা গেল যা মেট্রো চালু হওয়ার আগে ছুটির দিন ছাড়া পাওয়াই যেত না।
মঙ্গলবার শাহবাগের ট্রাফিক পুলিশ আব্দুল ওহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই লাইনে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে রাখতে হত, এখন তা নেমে এসেছে কয়েক মিনিটে।
“মেট্রোরেল ব্যবহার করায় অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি আর সবসময় বের করছেন না। তবে যাত্রীরা ওঠা নামা করার বাসের গতি কম, যা যানজটের অন্যতম কারণ।”
কাদের আলী ঢাকায় রিকশা চালান ১০ বছর ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রো স্টেশনের সামনে সোমবার কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “ছুটি ছাড়া এমন ফাঁকা রাস্তা তো দেখা যায় না। টেরেন (মেট্রোরেল) চালু হওনের পর এই এলাকায় জ্যাম কমছে। কিন্তু যাত্রী কইম্যা গেছে।”
যাত্রী কম থাকায় ফার্মগেট থেকে মিরপুরের পথে বাসও কম। ফলে যারা বাসে চলতে চান, তাদের জন্য এই বাহনে উঠানামার স্বস্তি আসলে খুব একটা আসেনি।
শাহিদা বেগমের বাসা তেজতুরী বাজার। শাহবাগ মোড়ে পরপর তিনটি বাসে ওঠার চেষ্টা করেও তিনি পারেননি। চাইলে ফার্মগেট পর্যন্ত মেট্রোতে চড়তে পারতেন। কিন্তু ভাড়া পড়ত ২০ টাকা, বাসে তা ১০ টাকা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শাহিদা বলেন, “আমি মেট্রোরেলে উঠতে পারি না। তাই বাসই ব্যবহার করতে হয়। মেট্রো চালুর জন্য রাস্তার জ্যাম কিছুটা কম মনে হয়। কিন্তু বাসে উঠা নামার কষ্ট আছে আগের মতই।”
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় শাহবাগ থেকে বাসে উঠার পর বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও বিজয় সরণিতে সিগনালেই দাঁড়াতে হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। মেট্রো চালুর আগে সিগন্যাল ছাড়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরাত না।
অ্যাপের মোটর সাইকেল চালক রিয়াজ আহমেদ সিগন্যালে এখনকার অপেক্ষাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, “শুধু অফিস শুরু আর ছুটির সময় নয়, ঢাকা শহরে দিন-রাত সব সময়েই জ্যাম লেগে থাকত। আর এখন শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট মোড়ে যানজট সহনীয় মাত্রায় এসেছে। এটাকে মেট্রোরেল চালুর সুফল বলেই মনে হচ্ছে।”
মিরপুর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাসে একদিন
সাপ্তাহিক কর্ম দিবসের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কে দিনের অধিকাংশ সময়ই যানজট দেখা যায়নি। বাসের যাত্রীও কম।
মিরপুর থেকে নিউ মার্কেট রুটে চলা মিরপুর লিংক ৩৬ নম্বর বাসের হেলপার মোহাম্মদ শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবারও দেখলেন জ্যাম নাই খুব একটা। মেট্রোরেল চালুর পর থেইক্যাই এমন অবস্থা। সন্ধ্যার সময় কিছুটা বাড়ে। তবে আগের সেই জ্যাম তো আর নাই।”
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে অস্থায়ী পানের দোকানি ষাটোর্ধ্ব আব্দুল গনি বহু বছর ধরেই ওই এলাকার যানজটের চিত্র দেখেছেন। এখন কী অবস্থা- সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “চার রাস্তার মোড় তো, সপ্তাহের শুরুর দিন সকালে বা কোনো দিন সন্ধ্যায় এখন গাড়ির চাপ বাড়ে।”
ফল বিক্রেতা হেলালউদ্দিন বললেন, “এখানে সারাদিন থাকি, সন্ধ্যার জ্যামটাই একটু চোখে পড়ে।”
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের কনস্টেবল জাকির হোসেন বলেন, “গাড়ির চাপ আছে। তবে যাত্রীর ভিড় কমেছে।”
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গলদঘর্ম অবস্থা না হলেও আগারগাঁওমুখী অনেক বাসই যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় খানিকটা যানজটের পরিস্থিতি থাকে।
বিকাল ৩টার পরে আয়াত পরিবহনের একটি বাসকে খুব ধীরগতিতে মিনিট দশেক সময় নিয়ে মোড় পার হতে দেখা গেল। আশপাশের অনেক গাড়ি এগোলেও যাত্রীর ডাকতে ডাকতে কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও আসতেই গাড়িটির লাগল ২৫ মিনিটের মত। চাইলে অর্ধেকেরও কম সময়ে আসতে পারত।
এই বাসের যাত্রী বাবলু মিয়া বলেন, “রাস্তা পুরো ফাঁকা, কিন্তু বাস আগায় না। সেই আগের অভ্যাস। এদের কারণে কখনও কখনও সময়ও লাগে বেশি, জ্যামও হয়।”
গাড়ির হেলপার ইকতার হোসেন বলেন, “যাত্রী কইম্যা গেছে।”
ট্রাফিকের কন্সটেবল আবুল কালাম বলেন, “জ্যাম নেই আর। খুব সকালে ৯-১০ টার দিকে খানিকটা গাড়ির চাপ থাকে।”
মেট্রোরেল চালুর পর রাইড শেয়ারিং এর চাহিদাও কমে গেছে বলে জানান মোটরসাইকেলের রাইডার আবু হানিফ। তিনি বলেন, “আমাদের আয় কমে গেছে। এখন মেট্রোরেলে চলে যাচ্ছে মানুষ।”
আগারগাঁওয়ে পাঠাওয়ের রাইডার হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাদের অবস্থা কাহিল। তেমন সাড়া পাওয়া যায় না যাত্রীর। তবে অন্য রুটে ভালোই পাওয়া যায়।”
বাসা পাল্টে ধানমন্ডি থেকে শেওড়াপাড়ায়
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলী আজাদের কর্মস্থল কাওরান বাজার। আসা যাওয়ার সুবিধার কথা ভেবে এতদিন বাসা রেখেছিলেন ধানমন্ডিতে। কিন্তু মেট্রোরেল তার চিন্তা পাল্টে দিয়েছে। যতক্ষণে ধানমন্ডি থেকে আসা যায়, তার চেয়ে কম সময়ে মিরপুর থেকে আসা যায়। তাই বাসা পাল্টে ফেলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জ্যামের ভয়ে সকাল ৮টার মধ্যে বাসা থেকে বের হতাম। মেট্রো চালুর পর শেওড়াপাড়ায় বাসা নিয়েছি। বাসার সামনে থেকে রেলে উঠি আর অফিসের সামনে এসে নামি। এমনকি বাচ্চাকেও স্কুলে দিয়েও আসার সময় পাচ্ছি এখন।”
আলী আজাদের মত কেউ মোহাম্মদপুর থেকে, কেউ ধানমন্ডি থেকে, কেউ গুলশান থেকে, কেউ খিলক্ষেত বা অন্য এলাকা থেকে মিরপুরে গিয়ে বাসা নিচ্ছেন। আর বাড়ির চাহিদা বাড়ায় ভাড়া বেড়ে যাওয়ার তথ্যও মিলছে।
তবু সমীক্ষার চেয়ে কম যাত্রী
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুরোদমে চালু হওয়ার পর প্রতিদিন ২ লাখ ৪০ হাজারের মত যাত্রী আসা যাওয়া করছে, তবে কোনো কোনো দিন সেটা আড়াই লাখও পার হয়।
প্রতিদিন আয় কত হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আয়ের তথ্য বলাটা মুশকিল, কারণ র্যাপিড পাস ও এমআরটি পাসের হিসাবটা প্রতিদিন দেওয়া যায় না, টাকা শেষ না হলে কার্ডের হিসাব আসে না।"
সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইফতিখার হোসেন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রেকর্ড ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা আয় হয়েছিল তাদের।
তবে সমীক্ষায় এক দিনে যাত্রীর সংখ্যা ধরা হয়েছিল আরো বেশি। এই রুটটি নির্মাণের উদ্যোগ যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন জানানো হয়েছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার যাত্রী মেট্রো ব্যবহার করতে পারবে।
এখন দিনে ১৫ ঘণ্টার মত মেট্রো চলে, সেই হিসাবে যাত্রী সংখ্যা দিনে আড়াই লাখের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল।
যাত্রী কম থাকার কারণ দুটি। প্রথমত এখন ট্রেন চলছে ১০ থেকে ১২ মিনিট বিরতিতে, যেটি ৫ মিনিটে নামানোর কথা। এখন প্রতিটি ট্রেনে কোচ থাকে ৬টি। সেটি বাড়িয়ে আটটি করার কথা বলা হচ্ছে।
নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “আপাতত টাইমের বিষয়টা দেখছি। সময় কমিয়ে আনার পর যদি সমস্যা থাকে তখন বগি বাড়ানোর বিষয়টা আসবে। টাইম কমিয়ে দেখি।"
মেট্রোরেলই ‘শেষ দাওয়াই’
ফ্লাইওভার, ইউটার্ন, একমুখী চলাচলসহ নানা সময় নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও যানজট বেড়ে চলার বাস্তবতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যানজট কমাতে ঢাকা শহরের শেষ দাওয়াই হল মেট্রোরেল।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে মেট্রোরেলের সুফল ভোগ করতে একে টেকসই করতে হবে। যার জন্য মেট্রোরেলের প্রবেশগম্যতা ও আন্তঃসংযোগের সঠিক সমন্বয় দরকার।”
সরকারের পরিকল্পনায় ঢাকায় মেট্রোরেলের রুট আছে ছয়টি। আর এই রুটগুলো কোনো না কোনোভাবে একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত থাকবে।
প্রথম চালু হওয়া এমআরটি-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিলের বদলে কমলাপুর যাবে। এই কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। উত্তরার দিয়াবাড়ীর বদলে অপর প্রান্ত টঙ্গীতে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের এমআরটি-১ ভূগর্ভ লাইনের কাজ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এই রুটে প্রায় ১২ কিলোমিটার একটি লাইন পূর্বাচলকেও যুক্ত করবে।
পাতাল ও উড়াল মিলে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটটি ২০২৬ সাল নাগাদ চালু করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি-৫ নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছে গত ৪ নভেম্বর। ২০ কিলোমিটার এই পথের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২০২৮ সালে।
২০৩০ সালে মেট্রোরেলে তিনটি রুট চালুর পরিকল্পনা আছে।
এর মধ্যে আছে এমআরটি-৫ সাউদার্ন, যেটি গাবতলী থেকে আসাদগেট ও রাসেল স্কয়ার হয়ে কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল ও আফতাবনগর হয়ে যাবে দাশেরকান্দি। এই রুটের অর্থায়ন নিশ্চিত প্রায়, তবে চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো হয়নি।
গাবতলী থেকে নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, কমলাপুর ও সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর পর্যন্ত চলবে এমআরটি-২ রুট। এর আরেকটি লাইন থাকবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত।
এই রুটটি নিয়ে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা স্মারক সই হয়েছে।
কমলাপুর থেকে সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত চলবে এমআরটি-৪। এই রুটটির অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।
আরও পড়ুন...
মেট্রোরেল: হয়রানিমুক্ত যাতায়াতে মুনতাহা, ফাতেমাদের উচ্ছ্বাস
দিনে-রাতে উত্তরা টু মতিঝিল, ভিড় ঠেলেও মেট্রোরেলে যাত্রা
টিটু মিয়ার চার ঘণ্টার ‘যন্ত্রণা’ মুছে দিল মেট্রো রেল
মেট্রোরেল: কমলাপুর পর্যন্ত যেতে অপেক্ষা ‘দেড় বছর’
'পিক আওয়ারে যাত্রীর ভিড়, দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে'
এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
গাবতলী-দাশেরকান্দির মেট্রোরেলের অর্থায়নে যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াও