“সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রো চলবে শুনে কি যে আনন্দ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারব না। মনে হল আমি আরও কিছু দিন বেশি বাঁচব।”
Published : 20 Jan 2024, 02:40 PM
মিরপুরের বাসিন্দা টিটু মিয়া ২৫ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন গুলিস্তানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানজট আর যাতায়াতের ভোগান্তি। আসা-যাওয়া মিলিয়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার 'অসহ্যকর' ওই চার ঘণ্টা পথ কমে দাঁড়াচ্ছে ২২ মিনিট করে ৪৪ মিনিট।
শনিবার সকালে টিটু মিয়া মিরপুর থেকে গুলিস্তানে যেতে চড়ে বসেন মেট্রো ট্রেনে, মাত্র ২২ মিনিটে সচিবালয় স্টেশনে নেমে পৌঁছে যান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এখন থেকে রাতেও ফিরতেও ট্রেন পাবেন, তাই দুর্ভোগ হবে না।
এখন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা স্টেশন ছাড়ছে প্রথম ট্রেন। আর মতিঝিল থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে।
সকাল ১১টার দিকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ট্রেনে চড়ে টিটু মিয়া বলেন, “আজ থেকে রাতেও আরামে বাসায় ফিরতে পারব ভেবে মনে হচ্ছে জীবন থেকে দিনে চার ঘণ্টার যন্ত্রণা মুছে গেল।”
সেই ‘যন্ত্রণা’ কেমন ছিল?
টিটু বলেন, “সকাল-রাতে আসা যাওয়ার সময় দুই ঘণ্টা করে। ড্রাইভার, কন্ডাক্টরের ক্যাচাল আর যানজট মিলে যে যন্ত্রণা দিত, মেজাজ খারাপ হয়ে যেত আমার। প্রায় প্রতিদিন মাথাব্যথা করত।
“অনেক দিন এমনও হয়েছে যে রাতে বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠে মৎস্য ভবনের সামনের সিগন্যালেই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বসে আছি। অনেক সময় জেদ করে সেই মৎস ভবন মোড় থেকে হেঁটেই মিরপুর চলে গেছি।
“সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রো চলবে শুনে কি যে আনন্দ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারব না। মনে হল আমি আরও কিছু দিন বেশি বাঁচব। আর এখন মাত্র ২২ মিনিটে মিরপুর থেকে গুলিস্তানে পৌঁছাব, এটা আমার কাছে বিরাট আনন্দের।”
ইবাহীম খলিল হাইকোর্টে ওকালতি করেন, থাকেন মিরপুরে। জানালেন, যানজটের কারণে সময়মতো আদালতে পৌঁছাতে পারতেন না অনেক সময়।
“অনেক সময় কোর্ট ধরার জন্য সকাল ৭টাতেও বাসে উঠেছি। রাতের ঘুমও ভালো হত না পথের টেনশনে। তবে গত কয়েক মাস ধরে সকালের মেট্রো ধরে কোর্টে আসতে পারলেও বিকেলে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তাম। তখন কীভাবে বাসায় ফিরব, তা নিয়ে টেনশনে থাকতাম। এখন থেকে ট্রেনে চড়ে নিরাপদে বাসায় যেতে পারব এতে আমার অনেক নির্ভার লাগছে।”
ষাটোর্ধ্ব বেসরকারি চারকরিজীবী মো. নাসির উদ্দিনকে প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেতে হয়। গত কয়েক মাস ধরে সকালে নির্বিঘ্নে যেতে পারলেও ফেরার সময় ছিল ভোগান্তি।
“বয়স বেশি বলে বাসে উঠতে পারতাম না। আবার উঠলেও সিট খালি না থাকলে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কষ্ট হত। এখন রাতেও মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো সার্ভিস চালু করায় আরামে আসার যাওয়া করতে পারব।”
এ কদিন উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর উত্তরা-আগারগাঁও-উত্তরা রুটে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে ট্রেন।
এখন থেকে পুরো পথেই ট্রেন চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত।
সকাল ৭টা ১০ থেকে সাড়ে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেলে পিক আওয়ার ধরা হচ্ছে। মাঝে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফ পিক আওয়ার।
পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন স্টেশনে আসবে। অফ পিক আওয়ারে ট্রেন স্টেশনে আসবে ১২ মিনিট পর পর।
বর্তমানে দিনে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার যাত্রী মেট্রোতে ভ্রমণ করছেন।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। এ বছরের শেষ দিন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই খুলে দেওয়া হয়।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ এখনও চলমান। এ বছর শেষের দিকে ওই অংশ চালু করা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় আরো বেশ কয়েকটি লাইনে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আছে। সেগুলো চালু হলে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় হবে বলে আশা করছে সরকার।