দিনে-রাতে উত্তরা টু মতিঝিল, ভিড় ঠেলেও মেট্রোরেলে যাত্রা

বাড়তি ভাড়া দিয়েও স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দে এক যাত্রী বললেন, টাকা দিয়ে সময় কিনতেও আপত্তি নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2024, 03:23 PM
Updated : 20 Jan 2024, 03:23 PM

মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশন। দুপুর ২টা ২০ মিনিট। আগের ট্রেনটিতে অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে উঠতে না পেরে পরের ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন দুই বোন সাদিয়া ও নাদিয়া।

পরের ট্রেনটিও এল যথাসময়ে; তবে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই দেখে ছোট বোন চিৎকার করে বলে উঠলেন, “আপ্পি এটাতেও মনে হয় উঠতে পারব না।”

সাদিয়া তখন জোর দিয়ে বললেন, “না সামনে থেকে সরবি না, ঠেলে ঠুলে হলেও এটায় উঠতেই হবে।”

ভিতরে ঠাসা ভিড় দেখেও সাদিয়া ও নাদিয়া সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক লাফে ট্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। কোনও রকমে ছোট্ট একটা জায়গা করে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের হাসি মুখ দেখা গেল বাইরে থেকে।

এবারও পেছনের কয়েকজন ঠিকই ট্রেনটিতে উঠতে পারলেন না। তারা আবার পরের ট্রেনের অপেক্ষায় থাকলেন। পরের মিনিটে আবারও শুরু হয়ে যায় নতুন যাত্রীর কোলাহল। ট্রেনের দরজা যেখানে থামতে পারে সেই স্থানে আবারও লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন যাত্রী।

সেখানে এত ভিড় হওয়া নিয়ে কথা বলতে শোনা গেল তাদের কাউকে কাউকে। সাঁই করে ট্রেন চলে গেলও সাদিয়া ও নাদিয়ার চিৎকার-চেচাঁমেচির প্রতিধ্বনিই যেন ভেসে এল অন্যদের কণ্ঠেও।

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি-৬ এর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের প্রথম দিন শনিবার দুপুরের টুকরো চিত্র এটি। পরের কয়েক ঘণ্টাতেও মেট্রোতে যেতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এতদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল যাত্রী চলাচল করত সকালে সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এখন থেকে মতিঝিল থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ৮টায়। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে আগে থেকেই রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে ট্রেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রথমবার যাত্রী পরিবহনকালে দিনভর এবং সন্ধ্যা ও রাতে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় লেগেই ছিল। সময় বাড়ানোর প্রথম দিনই দাবি উঠেছে ট্রেনের বিরতির সময় কমানোর।

দুপুরের সেই ট্রিপে ট্রেনের ওঠার আগে মিরপুরের যাত্রী সাদিয়া পারভিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেট্রোতে চড়ে পল্টনে খালার বাসায় ছোট বোনকে নিয়ে বেড়াতে আসছিলাম। সকালে এসে বিকাল পর্যন্ত থাকার ইচ্ছা থাকলেও জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় আবার দ্রুত ফিরতে হচ্ছে।

“মিরপুর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে পল্টন পৌঁছাতে পারায় এত ভাল লাগছে মনে হচ্ছে ঢাকা শহর খুব একটা বড় নয়। অথচ এই পথেই বাসে যেতে হলে দিন পার হয়ে যায়।”

পরের ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছালে দেখা যায় সেটিও যাত্রীতে বোঝাই। কষ্ট করে ঢোকা গেলও ভেতরে ঠিকমতো পা রাখার জায়াগা নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করে কোনও রকমে পা রেখে দাঁড়াতে পারলেও একজনের নি:শ্বাস গিয়ে লাগছে আরেকজনের গায়ে। এটি বিরক্তি তৈরি করলেও মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতায় তা মেনে নিচ্ছেন হাসিমুখেই।

ভিড়ের মধ্যেও এপাশ ওপাশ করে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সবাই হাসিমুখেই জানাচ্ছিলেন তাদের ভালো লাগার কথা। মতিঝিল থেকে আসা যাত্রীদের কয়েকজন বললেন, সবার চিন্তার চেয়েও ঢাকায় যেন মেট্রোরেল বেশি সফল। এখন সরকারের উচিত হবে চলমান অন্যান্য মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত করে রাজধানীর গণপরিবহন সেবা বিশ্বমানে উন্নত করা।

টাকা দিয়ে সময় কেনা

বেসরকারি চাকরীজীবি সোহেল আরমান পল্টন থেকে মেট্রোরেলে দাঁড়িয়ে ফার্মগেইট যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার অফিস পল্টনে বাসা ফার্মগেইটে। প্রতিদিন আমার এমন সময়েই আসা যাওয়া করতে হয়। বাসে ভাড়া দিতাম ১৫ টাকা। মেট্রোতে তা দ্বিগুণ। কিন্তু আমি হাসিমুখেই এই দ্বিগুণ টাকা দিতে রাজি আছি। কারণ, আগে আমার এটুকু রাস্তা আসতে সময় লাগত প্রায় ৪০ মিনিট। এখন মাত্র ১০ মিনিটেই যাচ্ছি। অর্থাৎ আমি ১৫ টাকা বেশি দিয়ে আমি প্রায় আধা ঘণ্টা সময় কিনছি।

“আমার মতো অনেকেই আছেন যারা টাকা দিয়ে সময় কিনতে চান।”

বিদেশেও মেট্রোতে চড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তার প্রত্যাশা বিশ্বমানের এ মেট্রোরেল যেন বিশ্বমানেই পরিচালনা করা হয়।

আরও পড়ুন

Also Read: 'পিক আওয়ারে যাত্রীর ভিড়, দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে'

Also Read: টিটু মিয়ার চার ঘণ্টার ‘যন্ত্রণা’ মুছে দিল মেট্রো রেল

Also Read: শনিবার থেকে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল সকাল থেকে রাত

Also Read: মেট্রোরেল: কমলাপুর পর্যন্ত যেতে অপেক্ষা ‘দেড় বছর’