বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে আদালত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আপত্তি তুলতে চাইছিলেন দুদকের কৌঁসুলি; হাই কোর্ট তাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, এতে কোনো ‘সমস্যা নেই’।
Published : 03 Jan 2024, 09:59 PM
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলা বাতিল প্রশ্নে হাই কোর্ট রুল জারির পরদিন ফের আদালতে গেছেন দুদকের আইনজীবী।
রুল নিয়ে কোনো বক্তব্য না দিলেও দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বুধবার বলার চেষ্টা করেন, খালিদীকে আদালত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়বে কি না।
তবে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চ তাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, দুটো বিষয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, সমস্যা হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ২০১৯ সালের অক্টোবরে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক, একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহলের ‘মিথ্যা প্রচার’ শুরু হয়।
বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে অভিযোগ করে সাড়ে আট মাস পর, ২০২০ সালের ৩০ জুলাই এ মামলা করে দুদক। এরপর ৪১ মাস পেরিয়ে গেলেও দুদকের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক দুদকের আনা ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। মামলাটিকে ‘অসার ও নিবর্তনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে তা বাতিলের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে হাই কোর্টে এই আবেদন করেন তিনি।
এরপর গত পৌনে দুই বছরে বেশ কয়েকবার এ মামলার তারিখ পড়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে বার বার সময় চেয়ে শুনানি পেছানো হয়েছে। কয়েকটি তারিখে দুদকের আইনজীবী হাজির না থাকায় শুনানি করা যায়নি।
শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রুল জারি করে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চ। তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলা কেন বাতিল করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয় সেখানে।
দুদক চেয়ারম্যান এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সেইসঙ্গে, মামলার অভিযোগপত্র না হওয়া পর্যন্ত খালিদীকে হাকিম আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয় হাই কোর্ট।
তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে মামলা কেন বাতিল হবে না: হাই কোর্টের রুল
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের জামিন আটকাতে হাই কোর্টে দুদক, রুল জারি
দুদকের আবেদন খারিজ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের জামিন আপিলেও বহাল
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের আবেদন শুনবে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ
দুদকের মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মঙ্গলবার আদালতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আইনজীবী মাহবুব শফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম রাবেয়া (মিতি)।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান তখনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তবে রুল হওয়ার পর তার অনুরোধে মামলাটি বুধবার সকালে ফের হাই কোর্টের এই বেঞ্চের কার্যতালিকার ১ নম্বরে আসে।
মঙ্গলবারের শুনানিতে যা হয়েছিল
মঙ্গলবার শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী আছেন কি-না, জানতে চান বিচারক।
আইনজীবী না থাকার কথা জানানোর পর শুরুতে খালিদীর আইনজীবী মাহবুব শফিকের কাছে মামলার দায়েরের সময় ও সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক।
মামলার তথ্য এবং চার্জশিট না হওয়ার বিষয় জানিয়ে আইনজীবী তখন মামলা বাতিলের আবেদন জানান।
বিচারক তখন বলেন, “আমরা রুল দিয়ে দিচ্ছি। বি ডিসপেন্সড উইথ কোর্ট অ্যাপিয়ারেন্স।”
এরপর আইনজীবী মাহবুব শফিক মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন জানান।
বিচারক পরে আদেশে খালিদীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে রুল জারি করেন। তিনি বলেন, “রুল রেডি করে নিয়ে আসেন। আমরা দেখব কোয়াশ (মামলা বাতিল) করার বিষয়।”
বুধবারের শুনানিতে যা হল
এদিন শুনানির শুরুতে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে বলতে বলেন। রুল নিয়ে যে তার বলার মত কিছু নেই, সে কথাও বিচারক বলেন।
খুরশীদ আলম খান তখন বলেন, “না, এতে আমার কোনো কিছু বলার নেই। ডিসপেন্সড উইথ (ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি)… এটা এফেক্টেড হয় কিনা।”
এ কথা বলে তিনি পত্রিকার একটি কাটিং আদালতকে দেখান, যেখানে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর দেশত্যাগে ‘নিষেধাজ্ঞার’ কথা বলা হয়েছে।
ওই খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর, যদিও তা পুরোপুরি সঠিক নয়। সেদিন হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়েছিল, বিদেশে যেতে হলে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক ২০২০ সালে হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার পর তা বাতিলের জন্য সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিল দুদক। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আপিল বিভাগ কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিল, এসব আবেদন নিয়ে এসে কেন তিনি আপিল বিভাগের ‘সময় নষ্ট’ করছেন।
হাই কোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশ জামিন মঞ্জুর করে শুনানিতে দুদকের আইনজীবীকে বলেন, “হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে। এরপর আপনারা দৌড়ে আপিল বিভাগে চলে গেলেন। আপিল বিভাগে যাওয়ার কী আছে?”
পরে জজ আদালতের জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করে দুদক। সেই আবেদনের শুনানি শেষে রুল দেয় হাই কোর্ট। তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে জজ আদালতের দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সেই রুল নিষ্পত্তি করে হাই কোর্ট জানায়, জামিনেই থাকবেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে সেই রুল শুনানির এক পর্যায়ে ওই বছর ২৪ নভেম্বর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দাবি তোলেন, তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পাসপোর্ট যেন আদালতে জমা রাখা হয়।
কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, রুলের ওপর রায় হবে ১ ডিসেম্বর (২০২২ সাল) এবং ওই রায় বা নতুন কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বিদেশে যেতে হলে খালিদীকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
এক বছর পর সেই প্রসঙ্গ ধরে খুরশীদ আলম খান বুধবারের শুনানিতে বলেন, তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে কি না।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “ট্রাভেল ব্যান। এতে তো কোনো সমস্যা হবে না।”
খুরশীদ আলম বলেন, “যদি এর মধ্যে চার্জশিট হয়ে যায়?”
বিচারক বলেন, “তাতে কী! তাতে কোনো সমস্যা হবে না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আইনজীবী মাহবুব শফিক তখন হাসতে হাসতে বলেন, “তালিকায় আইটেমটা দেখে ভাবলাম, আমি আবার কোনো ভুল করলাম কিনা।”
খুরশীদ আলম তখন আরেক অনুরোধ করেন আদালতকে। মঙ্গলবার যে রুল দেওয়া হয়েছিল, সেটি বুধবারের তারিখে দিতে বলেন তিনি।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “হ্যাঁ, দেওয়া যায়। তবে অর্ডারটা আবার ‘রিকল’ করতে হয় আরকি। কালকের তারিখেই দিই।”
দুদকের আইনজীবী তখন আর দ্বিমত করেননি। শুনানি সেখানেই শেষ হয়।
কী আছে মামলায়
এ মামলার এজাহারে দুদক বলেছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং কোম্পানির আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় ‘এলআর গ্লোবালের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ওই ৪০ হাজার শেয়ারের ‘প্রকৃত মূল্য ৪০ লাখ টাকা’। কিন্তু ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকায়। ওই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা চারটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে জমা করা হয়েছে।
কোম্পানির যে অ্যাসেট ভ্যালুয়েশনের ভিত্তিতে ওই শেয়ার লেনদেন হয়েছে, তা ‘ভুয়া’ ছিল অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়, “তৌফিক ইমরোজ খালিদী উক্ত অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”
দুদকের আবেদনে ২০১৯ সালের নভেম্বরে খালিদী এবং বাংলাদেশ নিউজ টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স লিমিটেডের ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো ‘অবরুদ্ধ’ করা হয়, এখনও তা সেই অবস্থাতেই আছে।
অনুসন্ধান, তলব এবং মামলার এজাহার- সবগুলো পর্যায়ে কমিশনের লিখিত ভাষা যেভাবে বার বার বদলে গেছে, তাকে এর আগে ‘দুদকের গোল পোস্ট বদলের নমুনা’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন খালিদীর একজন আইনজীবী।
এ মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর করা আবেদনে বলা হয়, দুদকের দায়ের করা ওই এজাহারে আইন অনুসারে ‘প্রাইমা-ফেসি’ বা প্রাথমিক সারবত্তা নেই। মামলাটি ‘অসার, গোলমেলে, নিপীড়নমূলক’। এটি চালিয়ে যাওয়া হবে আদালত ও আইনগত প্রক্রিয়ার অপব্যবহার। তাই ‘চূড়ান্ত ন্যায় বিচারের স্বার্থে’ এটির কার্যক্রম বাতিল চাওয়া হয়।
আর্জিতে যুক্তি দেওয়া হয়, এফআইরে বলা অভিযোগ যদি সত্য বলে ধরেও নেওয়া হয়, তাহলেও তা দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে বিচার্য নয়।
এজাহারে অর্থের উৎস নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা খণ্ডন করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আবেদনে বলা হয়েছে, স্বীকৃতভাবে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ওই টাকা অর্জন করা হয়েছে। তাই বিক্রি করা শেয়ারের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা শেয়ার ক্রয়কারীকে করা উচিত।
তাছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের দপ্তর থেকে যথাযথভাবে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি কোম্পানি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সুতরাং শেয়ার বিক্রির জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রযোজ্য নয়।
তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কী যুক্তি
কোন পরিস্থিতিতে কী পরিকল্পনা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বিনিয়োগ চুক্তি করেছিল, সেই অর্থ কোথায় কীভাবে আছে বা ব্যয় হয়েছে, কেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী নিজের হাতে থাকা কিছু শেয়ার বিক্রি করেছেন এবং ওই চুক্তির পর কী কী ঘটেছে তার একটি বিবরণ ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত কলামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তুলে ধরেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
‘অল ফর জার্নালিজম!’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিকাশ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া দীর্ঘদিনের ‘স্বল্প বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগ খরার’ কারণে কর্মীদের অনেকের বেতন বকেয়া পড়ছিল, বেড়ে যাচ্ছিল দায়; সে কারণে কোম্পানির ৩৭ হাজার ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রতিটি শেয়ার মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকায় ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে।
তারিখ ধরে পুরো ঘটনাক্রম তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সেই নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম (আইএম) তৈরির জন্য ব্র্যাক-ইপিএলের সঙ্গে এনডিএ স্বাক্ষরিত হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কয়েক মাস কাজ করে একটি ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম তৈরি করে ব্র্যাক-ইপিএল। তাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন হল ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৮), তখনকার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি টাকা।
পরে এলআর গ্লোবালের সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে ব্র্যাক-ইপিলের কাছ থেকে ইনফরমেশন মেমোরেন্ডামের হালনাগাদ সংস্করণ আনা হয়। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর চুক্তি হয় এলআর গ্লোবালের সঙ্গে।
৬ অক্টোবর বিনিয়োগের টাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মূল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিউজ টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স লিমিটেড এবং তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়। তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার হাতে থাকা কোম্পানির শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে দেওয়ায় ওই টাকা ‘পুরোপুরি বৈধভাবেই’ তার অ্যাকাউন্টে যায়।
ওই নিবন্ধে তৌফিক ইমরোজ খালিদী লিখেছেন, ওই বিনিয়োগ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে পাওয়া অর্থের ২৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হয়েছে কোম্পানির পুঞ্জিভূত দায়ের একটি বড় অংশ মেটাতে। আর তার শেয়ার বিক্রির টাকা কোথায় আছে তা এফডিআর অ্যাকাউন্টগুলো দেখলেই ‘বোঝা যায়’।
একজন সাবেক সহকর্মী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক পোস্টে দুদকের তদন্তসহ পুরো বিষয়টিকে ‘হয়রানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক ওই নিবন্ধে প্রশ্ন রাখেন- ‘নৈতিক সাংবাদিকতার’ চর্চা করাই তার এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ভুল’ ছিল কি না। ‘অনেক প্রথমের জন্ম দেওয়া’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ক্ষতি করে কার স্বার্থ হাসিল’ করা হচ্ছে? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং যিনি এর নেতৃত্বে, তার ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করে কার কী লাভ’?
“সব মিলিয়ে এ এক হতাশাজনক পরিস্থিতি। কিছু বিতর্কিত লোক, যাদের কাজ সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এতটা নগ্নভাবে ব্যবহার- এটা আমরা কখনও দেখতে চাই না, যখন আমরা সেরকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যেটাকে মানুষ অনুকরণ-অনুসরণ করবে, যেটা হবে মানুষের ভরসার জায়গা।… বাস্তবিক অর্থেই আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”