দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে গাজীপুর সিটি ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আগের দফায় বরখাস্ত এ মেয়র; মাকেও দাঁড় করিয়েছেন।
Published : 28 Apr 2023, 07:23 PM
ক্ষমা চেয়ে শৃঙ্খলা মেনে চলার শর্তে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চার মাস যেতে না যেতেই ফের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম; শেষ পর্যন্ত সরে না দাঁড়ালে আবার কঠোর শাস্তির মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগের দফায় বরখাস্ত হওয়া এ মেয়র আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন; তার মাকেও নির্বাচনে দাঁড় করাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর ‘গুম, গ্রেপ্তার ও মেরে ফেলার’ ভয়ে থাকার কথাও বলেছেন।
আগের দফায় বির্তকের জন্ম দিয়ে বহিষ্কার হওয়া গাজীপুরের এ নেতা শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে প্রার্থী হলে কঠোর ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দলে স্থায়ীভাবে জায়গা হারাতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাদের কয়েকজন বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। কেউ বলছেন, এখনই সময় হয়নি এ বিষয়ে কথা বলার। তবে দলের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। যখন যেটা প্রয়োজন, দল সেটাই করবে বলে তারা মনে করেন।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বৃহস্পতিবার আজমত, জাহাঙ্গীর ও তার মা জায়েদা খাতুনসহ ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আগামী রোববার এসব মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে। ৮ মে পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আজমত বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘আস্থা থাকলে’ জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেই তার বিশ্বাস। সেজন্য তিনি ৮ মে পর্যন্ত দেখার কথাও বলেছেন।
তবে ভোটের মাঠ থেকে সহজে সরছেন না, এ কথা জানিয়ে রেখেছেন জাহাঙ্গীর। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র করে’ না সরালে তিনি সরবেন না।
“আমার স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার কোনো পথ নাই, যদি আমাকে সরিয়ে দেওয়া না হয়। উপরে আল্লাহ আছে, নিচে গার্জিয়ানরা আছেন তারা বুঝবেন”, বলেন তিনি।
যে কোনে ধরনের খারাপ পরিণতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হয়ত কালকের পরে আমার পায়ে শিকল পড়তে পারে। আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারে, আমাকে গুম করতে পারে।”
ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও একাত্তরে শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগ ওঠার পর দল ও সিটি করপোরেশনের পদ হারানোর দেড় বছর পর জাহাঙ্গীর ‘ক্ষমা’ পান গত ১ জানুয়ারি।
কিন্তু চার মাস না যেতেই রাজধানী লাগোয়া মহানগরটিতে ২০১৩ সালের নির্বাচনের আমেজ ফিরে এসেছে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম আছে, দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হবে না। যখন যেটা প্রয়োজন, দল সেই সিদ্ধান্তই নেবে। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আর ব্যক্তিগত কথা নিয়ে কথা বলার সময় আরও আছে। এটা নিয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি।“
দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ব্যক্তি নয়, সে নৌকার প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজমত উল্লা খানের বিরোধীতা করা মানে নৌকার বিরোধীতা করা।“
অতীতে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে শর্ত সাপেক্ষে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার সে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "জাহাঙ্গীরের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বক্তব্য আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে দলে আর জায়গা পাবে না, জায়গা হবে না।"
আরও পড়ুন:
গাজীপুরের জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল আওয়ামী লীগ
জাহাঙ্গীর সরে দাঁড়াবেন, বিশ্বাস আজমতের
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ‘গুমের শঙ্কায়’ জাহাঙ্গীর
গাজীপুরে মায়ের জন্যও মনোনয়ন ফরম তুললেন জাহাঙ্গীর
মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর সাময়িক বরখাস্ত: মন্ত্রী