বুধবার দুপুরে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে দুজনের নামেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়।
Published : 26 Apr 2023, 08:06 PM
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বরখাস্ত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন; পাশাপাশি তার মা জায়েদা খাতুনের নামেও আরেকটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের নির্দিষ্ট সময়সীমার আগের দিন বুধবার দুপুরে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে দুজনের নামেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়।
মেয়র পদের প্রার্থিতা নিয়ে গাজীপুরে তুমুল আলোচনার মধ্যেই বিকালে সাংবাদিকদের কাছে দুটি মনোনয়ন ফরম তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ জাহাঙ্গীর আলম।
১৫ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে নৌকার কাণ্ডারি করার পর জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মানুষ চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন।
এরপর জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি ঢাকায় দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন বলেন। তিনি প্রার্থী হতে পারেন এরকম আলোচনা জোরালই ছিল।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আরেকবার পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। নির্বাচনে সাধারণ জনগণকে যে ওয়াদা দিয়েছিলাম তিন বছরের মধ্যে বরখাস্ত করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
“বাকি কাজ শেষ করতে চ্যালেঞ্জটা নিতে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম তুলেছি।”
মায়ের জন্য মনোনয়ন ফরম তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বরখাস্ত মেয়র বলেন, “ছেলের ওপর নির্যাতন করা হলে মা তো বসে থাকতে পারেন না। তাই মা নির্বাচনের মত দিয়েছেন। আমার তো বাবা নেই। মা অভিভাবক হয়ে দেখবেন।”
গত কয়েকদিন ধরেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের ছয়দানা এলাকার বাসভবনে তার অনুসারীদের ভিড় বেড়েছিল। নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের চাপ ছিল। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই অনেকে ভিড় করেছিলেন। তারা দিনভর সেখানে অপেক্ষা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মী বলেন, “তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের সহানুভূতি থাকায় জাহাঙ্গীর নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তিনি কর্মীদের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কথা দিয়েছিলেন।”
মায়ের নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই কর্মী বলেন, “এর আগে দলের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি চাপে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
“এবার দল থেকে কোনো চাপ এলে জাহাঙ্গীরের বিকল্প হিসেবে তার মাকে নিয়েই মাঠে নামবেন অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা। সেজন্য তার মা জায়েদা খাতুনও নির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত হয়েছেন।”
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে টঙ্গী পৌরসভার তিনবারের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান বিএনপির আব্দুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন।
সেবার মনোনয়ন চেয়েও না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর। তবে ভোটের আগে হঠাৎ তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। তবে তার পক্ষের নেতা-কর্মীদের আজমত উল্লার পক্ষে নামতে দেখা যায়নি।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরকেই নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে বেছে নেয়। তিনি বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে মেয়র পদে বসেন। কিন্তু তিনি মেয়াদ শেষের আগেই দল ও পদ থেকে বহিষ্কার হন।
এবার মনোনয়ন বঞ্চিত জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামায় নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের তিনিই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, গণফ্রন্টসহ বেশ কয়েকজন মেয়র পদপ্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
তবে বিএনপির কোনো পদধারী নেতা এখন পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তবে কারান্তরীন সাবেক যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত মেয়র পদে ১৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪০ জন এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
তফসিল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দেওয়ার শেষ সময়। ৩০ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম বাছাই, ৮ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ, ৯ মে প্রার্থিদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ভোট গ্রহণ করা হবে ২৫ মে।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোট নেওয়ার জন্য ৪৭৮টি কেন্দ্র থাকবে, কক্ষ থাকবে ৩৪৯১টি। অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪৮৬টি।
এ ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসার ৪৭৮ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তিন হাজার ৪৯১ জন এবং ৬ হাজার ৯৮২ জন পোলিং অফিসার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন।