জাহাঙ্গীর সরে দাঁড়াবেন, বিশ্বাস আজমতের

“আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি তার যদি আস্থা থাকে, দেশের উন্নয়নের প্রতি তার আস্থা থাকে, তাহলে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2023, 12:03 PM
Updated : 27 April 2023, 12:03 PM

দলের ‘নেতৃত্ব ও উন্নয়নের প্রতি আস্থা থাকলে’ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে দূরে থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার ও মায়ের নামে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ভোটের মাঠে থাকেন কি না, তা ‘দেখার’ কথা বলছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন আজমত।

তিনি বলেন, “আমি পত্রপত্রিকায় দেখেছি জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা নমিনেশন সংগ্রহ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) প্রার্থী হিসেবে থাকবেন কি-না তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আগামী ৮ মের (মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন) পরেই তা দেখা যাবে।”

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোটের চিত্র ফিরে এসেছে ১০ বছর পর। এক দশক আগের সেই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল আজমতকে। দলের সমর্থনের প্রত্যাশী ছিলেন সে সময়ের তরুণ নেতা জাহাঙ্গীরও।

দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার পর নিখোঁজ হন জাহাঙ্গীর। ভোটের আগে আগে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম থেকে যায়।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সেই নির্বাচনে আজমত হারেন এক লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে।

সেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের সমর্থক নেতা-কর্মীদের আজমত উল্লাহর পক্ষে নামতে দেখা যায়নি। এটা তখন নৌকার পরাজয়ে ‘ভূমিকা’ রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাঁচ বছর পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।

সেই নির্বাচনের পর থেকে রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে জাহাঙ্গীরের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। বরখাস্ত হন পদ থেকেও।

ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

দলে ফেরার চার মাস যেতে না যেতেই সেই জাহাঙ্গীর এবার ‘জনগণের চাওয়া পূরণে’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে নামার ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতবারের বিজয়ী মেয়র তার মায়ের নামেও আরও একটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আজমত বলেন, “উনি (জাহাঙ্গীর) যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাই বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি তার যদি আস্থা থাকে, দেশের উন্নয়নের প্রতি তার আস্থা থাকে, তাহলে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”

ভোট ‘সুষ্ঠু হবে’

নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, এমন অভিযোগ তুলে বিএনপি এই ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে গত নির্বাচনে দলের প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি এবার নির্বাচনে এসেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে।

তবে ভোটের পরিবেশ আর জয় নিয়ে কোনো সংশয় নেই আজমত উল্লা। তিনি বলেন, “নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণটা নির্বাচনে নিশ্চিত হবে।

“বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বার বার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। নির্বাচন কমিশন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হবে। সুতরাং আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।”

জনগণ নৌকার পক্ষে আছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তিনি বলেন, “আমার শক্তি জনগণ। আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। নৌকার পক্ষে জনতা আছে, তাই আমি নৌকার প্রতিপক্ষ কাউকে মনে করি না।”

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটারদের মধ্যে ‘আমেজ দেখতে পাওয়ার’ কথাও বলছেন আজমত উল্লা। তিনি বলেন, “তারা (ভোটার) অপেক্ষা করছে নির্বাচন দিনটার জন্য।”

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আজমতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, মেয়র পদে বিক্রি হওয়া ১৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ১২টি।

কাউন্সিলর পদের জন্য কেনা ৩৪৩টি মনোনয়নের মধ্যে ২৯০টি এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বিক্রি হওয়া ৮৯ টি মনোনয়নের মধ্যে জমা পড়েছে ৮২টি।

 ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণে ৪৭৮টি ভোট কেন্দ্র, ৩ হাজার ৪৯১টি ভোট কক্ষ এবং ৪৮৬টি অস্থায়ী ভোট কক্ষ থাকবে।

নির্বাচনে ৪৭৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৬ হাজার ৯৮২ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই, ৮ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ৯ মে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আগামী ২৫ মে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট দেবে গাজীপুরবাসী।