ইসরায়েল দাবি করছে তারা হামাসকে শক্তিহীন করে দিচ্ছে। কিন্তু গাজা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার যে প্রতিশ্রুতি নেতানিয়াহু সরকার দেশবাসীকে দিয়েছেন তাতে এখন পর্যন্ত তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।
Published : 17 May 2024, 11:20 AM
গাজার উত্তরাঞ্চলে পুনরায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের ট্যাঙ্কগুলোকে বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার জাবালিয়ার প্রাণকেন্দ্র ঢুকতে দেখা গেছে। যেখানে তাদের হামাসের ছোড়া ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী রকেট এবং মর্টার বোমার মোকাবেলা করতে হয়েছে। অন্যদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফায় আর অগ্রসর না হলেও তীব্র আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ।
সাত মাসের বেশি সময় ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে এ যুদ্ধ শুরু করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু সর্বাত্মক এই যুদ্ধে নিজেদের পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা ব্যবহার করেও ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাশা অনুযায়ী অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের গাজা অভিযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করে আনা। যে লক্ষ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলা চলে।
এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হামাসকে গাজার মাটি থেকে মুছে ফেলার লক্ষ্য অর্জন কতটা কঠিন হতে চলেছে।
হামাসের সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদ উভয়ই দারুণভাবে সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলের অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু গাজার উত্তরের সব দিকে প্রতিপক্ষ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। নতুন যুদ্ধক্ষেত্র রাফা তে হামাস নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে।
যদিও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গালান্ত দাবি করেছেন, “আমরা হামাসকে শক্তিহীন করে দিচ্ছি।”
তিনি রাফায় আরও সেনা মোতায়েন করার কথাও জানান। বলেন, সেখানেও বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয়েছে।
এদিকে, রাফায় আইডিএফ এর অভিযান প্রসঙ্গে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, তারা ‘যেকোনো মূল্যে’ নিজেদের লোকজনকে সুরক্ষা করবে।
রাফায় এখন হামাসের চারটি ব্যাটেলিয়ন যুদ্ধ করবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদেরও সেখানে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই তারা রাফায় স্থল অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যদিও রাফায় স্থাল অভিযান শুরু না করতে ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। রাফার বাসিন্দা এবং গাজার নানা প্রান্ত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা মোট প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি ছোট্ট এই শহরটিতে অবস্থান করছিল। ইসরায়েলের নির্দেশে অনেকে এখন রাফা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। যদি গাজায় নিরাপদ স্থান বলে আর কিছু নেই। এখনও বহু ফিলিস্তিনি তাই রাফায় অবস্থান করছেন। সেখানে স্থল অভিযান শুরু হলে গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা।
দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে-র কাছে রাফায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। বলেছে, এটা তাদের ‘খেলা শেষ করার পরিকল্পনার অংশ’। যাতে গাজা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইসরায়েল গাজায় দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, “আইসিজে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর যে নির্দেশ দিয়েছে আমরা সেটা পালন করেছি।”
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। ভূমধ্যসাগর উপকূলের ছোট্ট এই ভূখণ্ডটি দুর্ভিক্ষের দ্বারা প্রান্তে রয়েছে। গাজায় ত্রাণ প্রবেশের প্রধান দুই সীমান্ত পথ রাফা ক্রসিং এবং কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস গাজায় পাঠানো ত্রাণ নিয়ে নিচ্ছি। আর নিজেদের সুরক্ষার জন্য তাদের হামাসকে নির্মেূল করা আবশ্যক।
নিজেদের সুরক্ষার এই লক্ষ্য পূরণে ইসরায়েল কত দিনে সফল হবে তার উপর নির্ভর করছে গাজা যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। এ যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের নরক যন্ত্রণা তত বাড়বে, দীর্ঘ হবে মৃত্যুর মিছিল।