সূর্যের চেয়ে কয়েকগুণ বড় বিভিন্ন তারা জীবনের শেষ দিকে বিস্ফোরিত হয় ‘সুপারনোভা’ হিসেবে। এমন বিস্ফোরণ থেকে গঠিত হয় ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন তারা।
Published : 10 Nov 2024, 05:22 PM
সূর্যের চেয়ে প্রায় আট গুণ বড় বিভিন্ন তারা জীবনের শেষ দিকে বিস্ফোরিত হয় ‘সুপারনোভা’ হিসেবে।
এমন বিস্ফোরণ থেকে গঠিত হয় ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন তারা। এগুলো এতটাই শক্তিশালী হয়ে থাকে যে, এরা কয়েক মাসের মধ্যে নিজস্ব ছায়াপথকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তবে, জ্যোতির্বিদরা সম্ভবত এমন এক বিশালাকায় তারা চিহ্নিত করেছেন, যা বিস্ফোরণ এড়িয়ে সরাসরি ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হয়েছে।
বিভিন্ন তারা বাইরের ফিউশন শক্তি এবং নিজের ভেতর থাকা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে বলে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
যখন কোনো বিশাল তারা নিজস্ব বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করে, তখন এর হাইড্রোজেন ফুরিয়ে আসতে শুরু করে। এতে করে ফিউশনের প্রবণতা আগের চেয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে।
এর ঘটনার কারণে বাইরে থেকে আসা ফিউশন শক্তি আর ওই তারার শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণকে আকৃষ্ট করতে পারে না ও তারাটি নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়।
সচরাচর এমন পরিস্থিতিতে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে, যেখানে তারা ধ্বংস হয়ে ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন তারা গঠিত হয়।
তবে, কখনও কখনও এইসব তারা সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত না হয়ে বরং সরাসরি ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হয়েছে, এমন নজিরও মিলেছে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথে ‘এম৩১-২০২৪-ডিএস১’ নামের একটি বিশাল তারা কীভাবে সুপানোভায় বিস্ফোরিত হয়নি।
‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স অফ এ ম্যাসিভ স্টার মার্কিং দ্য বার্থ অফ এ ব্ল্যাক হোল ইন এম৩১’ শীর্ষক এই গবেষণার প্রধান লেখক এমআইটি’র ‘কাভলি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড স্পেস রিসার্চ’ বিভাগের পোস্টডক্টরাল শিক্ষাবিদ কিশলয় দে।
এ ধরনের সুপারনোভা ‘টাইপ ২’ বা ‘কোর-কল্যাপ্স’ সুপারনোভা নামে পরিচিত, যা কিছুটা বিরল। মিল্কিওয়ে’তে এমন নজির মেলে প্রায় একশ বছরে একবার।
সুপারনোভা নিয়ে বিজ্ঞানীদের এত আগ্রহ থাকার কারণ হল, এদের থেকে বেশ কিছু ভারী বস্তু তৈরি হয়ে থাকে। আর এদের শক ওয়েভ তারা গঠনের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনকি এগুলো বিভিন্ন এমন মহাজাগতিক রশ্মি তৈরি করে, যা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সুপারনোভা নিয়ে আমাদের প্রচলিত বোঝাপড়া হয়ত সঠিক নয়।
২০০৯ সালে জ্যোতির্বিদরা এমনই আরেকটি ব্যর্থ সুপারনোভার খোঁজ পেয়েছিলেন, যা ছিল লাল রঙের সুপারজায়ান্ট তারা ‘এনজিসি ৬৯৪৬’।
‘ফায়ারওয়ার্কস গ্যালাক্সি’ নামে পরিচিত এ তারায় প্রায় ২৫টি ‘সোলার মাস’ আছে, যা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর স্রেফ একটি অনুজ্জ্বল ইনফ্রারেড আভা ফেলে গেছে।
২০০৯ সালে এর উজ্জ্বলতা ১০ লাখ ‘সোলার লুমিনোসিটি’ পর্যন্ত বেড়ে গেলেও ২০১৫ সাল নাগাদ এর আলো আবারও হারিয়ে যায়।
‘লার্জ বাইনোকুলার টেলিস্কোপ’ পরিচালিত এক জরিপ ২৭টি ছায়াপথ মনিটর করেছে, যেখানে এমন হারিয়ে যাওয়া বিশাল তারা থাকতে পারে। এর ফলাফলে উঠে এসেছে, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বিশাল তারাই কেবল সুপারনোভা হিসেবে নিজের জীবন শেষ করতে পারে। তবে, এর বাস্তবিক রূপ নিশ্চিত হওয়া গেছে কেবল ‘এম৩১-২০২৪-ডিএস১’ ও ‘এনজিসি ৬৯৪৬’ নামের তারা দুটি’তে।