উচ্চশক্তির এসব সুপারফ্লেয়ার নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষকদের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বিশদ তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে এই গবেষণা।
Published : 16 Dec 2024, 12:45 PM
পৃথিবীর সৌরজগতের একমাত্র তারা হচ্ছে সূর্য। শক্তিশালী সৌর ঝড়ের জন্যও সুপরিচিত এটি। ঝলমলে অরোরা তৈরি করে এসব সৌর ঝড়, যা ঝামেলা তৈরি করে দিতে পারে পৃথিবীতে থাকা প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন কাজেও।
কিন্তু সূর্যপৃষ্ঠে কি এর চেয়েও চরম মাত্রায় বিস্ফোরণ হতে পারে?
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, চরম মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে সূর্য এবং আমাদের সূর্যের মতো বিভিন্ন তারা প্রায় প্রতি শতাব্দীতে একবার সুপারফ্লেয়ার তৈরি করতে পারে। আর এর ফলে ঘটানো সম্ভব চরম মাত্রার বিস্ফোরণ।
বিভিন্ন সুপারফ্লেয়ার অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে থাকে, যা অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক অক্টিলিয়ন জুল শক্তি বের করে। বর্তমানে ব্যাপক আকারে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য এই শক্তি যথেষ্ট বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এসব ঘটনা কতবার ঘটে তা বোঝার জন্য সূর্যের মতো পরিবেশ রয়েছে এমন হাজার হাজার তারা নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।
সৌর কার্যকলাপের প্রত্যক্ষ হিসাব করা সম্ভব হচ্ছে কেবল কয়েক দশক ধরে। তাই হাজার হাজার বছর ধরে সূর্যের আচরণ কেমন ছিল, সেটি জানতে হলে গবেষণার পরোক্ষ পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয় গবেষকদের।
সাধারণত অতীতের সৌর বিস্ফোরণের প্রমাণ মেলে পৃথিবীর প্রাচীন গাছের রিং ও হিমবাহের বরফে। তবে বিভিন্ন সুপারফ্লেয়ার কত ঘন ঘন ঘটে তার সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না এসব পদ্ধতিতে।
আরও ভাল তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘কেপলার স্পেস টেলিস্কোপে’র দিকে মনোযোগ দেয় বিজ্ঞানীদের একটি দল। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তারা’র উজ্জ্বলতা পর্যবেক্ষণ করেছে এ টেলিস্কোপটি।
উজ্জ্বলতার ওঠানামা বিশ্লেষণ করে ৫৬ হাজার ৪৫০টি তারা’র ডেটাসেটের মধ্যে ২ হাজার ৫২৭টি সূর্যের মতো তারা’র ২ হাজার ৮৮৯টি সুপারফ্লেয়ার শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই বিশ্লেষণ সরবরাহ করেছে দুই লাখ ২০ হাজার বছরের নাক্ষত্রিক কার্যকলাপের প্রমাণ।
সতর্কতার সঙ্গে সূর্যের মতো তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতার বিভিন্ন তারা নির্বাচন করেছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে তারা’র উজ্জ্বল শিখার অন্যান্য উৎস এ গবেষণায় বিবেচনায় নেননি গবেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে মহাজাগতিক বিকিরণ বা গ্রহাণুর মতো বিভিন্ন বস্তু।
‘সোলার টুইনস’-এর উপর গুরুত্ব দিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, গড়ে প্রতি ১০০ বছরে একবার সুপারফ্লেয়ার তৈরি করে সূর্যের মতো বিভিন্ন তারা।
এসব সুপারফ্লেয়ারের মতো ঘটনা কত ঘন ঘন ঘটে তা দেখে অবাক হয়েছে গবেষণা দলটি। আগের বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছিল, বিভিন্ন সুপারফ্লেয়ার প্রতি এক হাজার থেকে দশ হাজার বছরে একবারই ঘটতে পারে। তবে এসব গবেষণা সুনির্দিষ্ট ছিল না। কারণ আগের গবেষণায় শিখার সঠিক উৎস চিহ্নিত করতে পারেননি গবেষকরা।
“এ থেকে বোঝা যায়, সূর্যের মতো বিভিন্ন তারার মধ্যে এই চরম বিস্ফোরণ ঘটানোর এ প্রবণতা স্বাভাবিক,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ড. ভ্যালেরি ভাসিলিয়েভ।
তারার তীব্র চৌম্বকীয় কার্যকলাপ থেকে তৈরি হয় এসব উচ্চশক্তির সুপারফ্লেয়ার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষকদের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বিশদ তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে এই গবেষণা। যা আমাদের সূর্যের আচরণ আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করেছে বিজ্ঞানীদের।
পৃথিবীর ওপর এমন চরম সৌর ঘটনার প্রমাণ নিয়েও গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন– গাছের রিং ও বরফের বিভিন্ন কোরে থাকা তেজস্ক্রিয় মৌল কার্বন-১৪ এর মতো বিভিন্ন আইসোটোপ। যা শক্তিশালী সৌর ঝড়ের ইতিহাস তুলে ধরেছে বিজ্ঞানীদের কাছে।
গত ১২ হাজার বছরে পাঁচটি প্রধান সৌর ঘটনা চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা, যা গড়ে প্রতি দেড় হাজার বছরে একবার ঘটে।
সবচেয়ে তীব্র ঘটনার মধ্যে অন্যতম ১৮৫৯ সালের ‘ক্যারিংটন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত একটি ঘটনা। ওই সময় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা জুড়ে টেলিগ্রাফের বিভিন্ন সিস্টেমের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল এটি।