“তাকে পছন্দমত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সিট দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে কর্তৃপক্ষ।”
Published : 04 Mar 2023, 05:56 PM
উচ্চ আদালতের নির্দেশে কড়া নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে ফিরেছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নির্যাতনের শিকার প্রথম বর্ষের সেই ছাত্রী। পরে তিনি পুরনো হল ছেড়ে নতুন হল বাছাই করেছেন।
শনিবার বেলা ১২টায় বাবার সঙ্গে পুলিশ প্রহরায় ক্যাম্পাসে আসেন ছাত্রী। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে নতুন হলের কথা জানান।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, “আগের হলে আমি যেতে চাই না। আমি অন্য হলে থাকতে আতঙ্কিত। তাই আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে চাই। আমি সেটাই বাছাই করেছি। আমি সার্বিক নিরাপত্তা চাই।“
পরে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে ওই শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের হল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।”
এই সভাতেই ছাত্রলীগের পাঁচ নেতকার্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কার করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: ছাত্রলীগের ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার
পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী হালিমা আক্তার ঊর্মি, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জাহান।
এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় নির্যাতনের শিকার ছাত্রী আবারও বলেন, “আমি চাই তাদের আজীবনের জন্য স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক।ফৌজদারী আদালতে আমি মামলা করতে চাই। “
প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বাবা।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মেয়ে মরেও যেতে পারতো। আমার মেয়ে যেন সার্বিক নিরাপত্তা পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সেই আহ্বান জানাই। এ ধরনের ঘটনা যেন আর কোনো ছাত্রীর সঙ্গে না ঘটে এজন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন সহযোগীদের দ্বারা নবীন ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও ধারণ করে নেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পরদিন সকালে ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যান ওই ছাত্রী।
পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী।
এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাই কোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আরও দুটি কমিটি করেছে।
এর মধ্যে আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করে ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
কমিটি ১৮ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার শেষে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীর হলের সিট স্থায়ীভাবে বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। সংগঠন থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।