“আমি যে ভয়ের কারণে, নিরাপত্তার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না সেটাও উনাকে বলেছি।“
Published : 26 Feb 2023, 04:30 PM
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রীর নেতৃত্বে নির্যাতনের শিকার প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে ফোন করে ‘ন্যায়বিচারের’ আশ্বাস দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি।
সাদ্দাম হোসেন বুধবার সকাল ১০টার দিকে ফোন করেন নির্যাতনের পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে পাবনার বাড়িতে অবস্থান করা প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে।
বিকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভাই সকাল ১০টার দিকে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোয় অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আমার পাশে থেকে সাহস যোগাবেন।”
“আমি উনাকে বলেছি, আমার কারও ওপর কোনো রাগ নেই। কিন্তু আমি এই ঘটনার বিচার চাই। তখন তিনি আমাকে বলেছেন, এই ঘটনার ন্যায়বিচার আমি পাব।“
“আমি যে ভয়ের কারণে, নিরাপত্তার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না সেটাও উনাকে বলেছি। উনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন”, যোগ করেন ওই ছাত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সকাল ১০টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলেছি, তোমার লড়াইয়ের সঙ্গে আমরা আছি, সব ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করবে।“
তিনি আরও বলেন, “আমি এটাও বলেছি, তোমার কাছ থেকে আমরা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছি। উত্তরে ওই ছাত্রী বলেছেন, আমি ন্যায়বিচার চাই, আমার ন্যায়বিচারে আপনারা সহযোগিতা করবেন এটা আমি আশা করি।”
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ’ করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঘটনা কাউকে জানালে ‘জীবননাশের হুমকিও’ দেন তারা। রোববার রাতের ওই ঘটনার পর বিপর্যস্ত ওই ছাত্রী সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার তিনি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এর বাইরে হাই কোর্টের নির্দেশে একটি বিচার বিভাগীয় এবং ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আরও দুটি কমিটি করেছে।
এর মধ্যে রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
নির্যাতিত ওই ছাত্রীকে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়ার জন্য রোববার ডাকা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তিনি ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি। পরে মোবাইল ফোনে তিনি তদন্ত কমিটিকে তার অভিযোগ জানান।
এ ব্যাপারে ওই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি আমার বক্তব্য নিয়েছে। আমি পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি, যা যা মনে আছে। আমার সঙ্গে যা যা ঘটেছে। আমি এক ঘণ্টা ৫ মিনিট ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি। তারা রেকর্ড করে নিয়েছে।”
আরও পড়ুন:
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা
‘তারা আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে,’ বললেন ইবি ছাত্রী
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: হাই কোর্টের আদেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি
ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: তদন্ত কমিটির মুখোমুখি ছাত্রলীগের দুই নেত্রী
তদন্ত কমিটিকে ‘নির্যাতনের’ বর্ণনা দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী
ইবির হলে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: ভুক্তভোগীর বক্তব্য শুনবে হল কর্তৃপক্ষ
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ইবির ছাত্রী