বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির ডাকে বুধবার ওই ছাত্রী এবং অভিযোগের মুখে থাকা পাঁচ ছাত্রী মুখোমুখি হন।
Published : 22 Feb 2023, 11:07 PM
“আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। তারা আমার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে।”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের শিকার সেই ছাত্রী বুধবার তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কথাগুলো বলেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির ডাকে তিনি এবং ছাত্রলীগ নেত্রীসহ অভিযোগের মুখে থাকা পাঁচজন মুখোমুখি হন।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল শাখার সহসভাপতি তাবাস্সুম ইসলাম মীমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টা পর্যন্ত র্যাগিং এর নামে একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ’ করা হয় বলে এক ছাত্রী অভিযোগ করেন।
এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করে। এসব কমিটির কাজ চলমান রয়েছে।
তার মধ্যেই হাই কোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তার গ্রামের বাড়ি পাবনায় চলে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ডাকে তিনি দুইবার এসে তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতনের বক্তব্য দেন। বুধবার তৃতীয়বারের মতো এসেছেন।
বিকাল ৩টায় তদন্ত কমিটির আহবায়কের কক্ষে ওই ছাত্রীসহ অভিযোগের মুখে থাকা পাঁচ ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৪টায় তারা কক্ষ ত্যাগ করেন।
পরে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে পৃথকভাবে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও ছাত্রলীগ নেত্রীরা কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী তার উপর নির্যাতনকারীদের তদন্ত কমটির সামনে চিনিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “তারা আমার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বলেছি আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে। তাদের কান্না কান্না ভাব ছিল।”
ছাত্রলীগ নেতীদের দেখে ভয় পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি কোনো ভয় পাইনি।”
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে একাধিক প্রশ্ন করা হলেও তিনি মুখ খোলেননি।
আরেক ছাত্রলীগ নেত্রী তাবাসসুম বলেন, “আমি যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলে দিয়েছি। আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের ডাকে বাবার সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন ওই ছাত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও জয়শ্রী সেন তাকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে হলে নিয়ে যান।
এ সময় ওই ছাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, “তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। আশা করি সুষ্ঠু বিচার হবে।”
এদিকে, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন হাই কোর্টের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা প্রক্টর অফিসে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে দুপুর ১টার দিকে তারা সেই হলে যান। সেখানে হল কমিটি ও হাই কোর্টের নির্দশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশিত তদন্ত কমিটির ডাকে তদন্ত কমিটির আহবায়কের কক্ষে যান।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, “সেদিনের ঘটনার পর আজকেসহ চারবার আসলাম। প্রতিবার আসতে ও যেতে প্রায় চার ঘণ্টা করে আট ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া প্রতিবার ৫০০/৬০০ টাকা খরচ হয় যা আমার জন্য কষ্টকর। আমি তো আর প্রশাসনকে বলতে পারি না যে এখানে থাকব। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে তাহলে ভালো হয়।”
সহকারী প্রক্টর সাজ্জাদুর রহমান টিটু বলেন, “আমরা ভুক্তভোগীকে নিরাপত্তা দিয়ে আলাউদ্দিন নগর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। পরে তারা নিজ ব্যবস্থাপনায় বাসায় ফিরে যান।”
আরও পড়ুন:
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: হাই কোর্টের আদেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি
ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: তদন্ত কমিটির মুখোমুখি ছাত্রলীগের দুই নেত্রী
তদন্ত কমিটিকে ‘নির্যাতনের’ বর্ণনা দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী
ইবির হলে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: ভুক্তভোগীর বক্তব্য শুনবে হল কর্তৃপক্ষ
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ইবির ছাত্রী