শামসের নিঃশর্ত মুক্তি চায় জাবি সাংবাদিক সমিতি

করিমুন নেসা তার প্রথম সন্তানকে হারিয়েছেন রাষ্ট্রের কাজে; আরেক ছেলে ‘দেশের মানুষের কথা বলতে গিয়ে’ এখন কারাগারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 02:32 PM
Updated : 30 March 2023, 02:32 PM

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

মানববন্ধনে বক্তারা শামসের মুক্তির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। 

মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, “সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার হওয়ার রাজনীতি এদেশে প্রথম নয়। গণমাধ্যমে সত্য কথা বলার কারণে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার কারণে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের হেনস্তা হতে হয়েছে; ওই সূত্রে সাংবাদিক শামস এখন কারাগারে।

“যুগের পর যুগ ধরে এ দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও পেলাম না আমরা।”

দেশে বসবাসে জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কেউ স্বাধীন অনুভব করছি না।”

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাকিব আহমেদ বলেন, “সাংবাদিক শামসের গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনা অতীতেও এদেশে ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছি বিভিন্ন সময়। সংবাদকর্মীরা যদি নির্বিঘ্নে কাজ করতে না পারে তাহলে গণতন্ত্র তার মতো করে চলতে পারে না।” 

যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই সেখানে গণতন্ত্র কীভাবে ঠিক থাকে, এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “শামসের আটক করার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা উচিত। সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে, সেটিকে কার্যকর করা দরকার।”

শামসুজ্জামান শামস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশেই আমবাগান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, “প্রথমেই সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। জাহাঙ্গীরনগরের সাবেক ছাত্র হিসেবে তার মুক্তি চাই না। তিনি একজন একনিষ্ঠ সাংবাদিক; এ জন্যই তার মুক্তি চাই।”

“করিমুন নেসা তার প্রথম সন্তানকে হারিয়েছেন রাষ্ট্রের কাজে, আরেক ছেলে দেশের মানুষের কথা বলত, সেও এখন কারাগারে। এই যদি হয় দেশের স্বাধীনতা তাহলে দেশ কীভাবে চলবে?”

একজন সৎ এবং একনিষ্ঠ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৭১ টেলিভিশনের ফারজানা রূপা কীভাবে দাঁড়ালেন? এমন প্রশ্ন রাখেন এই অধ্যাপক।

মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, “গত দুই দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর যে তামাশা লক্ষ্য করছি তা নিতান্তই ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সেই একই মানসিকতা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বানাতে ক্ষমতা কাঠামোকে উৎসাহিত করেছে। যেটি এখন সাংবাদিকতার যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে আজ শামস ভাই কারাগারে।”

শামসের ভাই পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারান। রবিউলও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

“সাংবাদিকদের এ ধরনের নিয়মিত আটকের ঘটনা আমাদের আতংকিত করেছে। এসব নিপীড়ন, হয়রানির ঘটনা তরুণদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আতংকের পাহাড় হিসেবে কাজ করছে। এতে বাড়ছে সেলফ সেন্সরশিপ। কমছে সাংবাদিকতায় সাহসীদের পদচারণা। এভাবেই পরিকল্পিতভাবে তৈরি হচ্ছে সাহসের দুর্ভিক্ষ।”

মানববন্ধনে তিনটি দাবি জানান বেলাল হোসেন। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে শামসের শর্তহীন মুক্তি, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং নিবর্তনমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা।

জাহাঙ্গীরনগর সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জহির ফয়সাল, ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য নাসির শিকদার ও মেহেদী মামুন।

শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, একই বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম। 

আরও পড়ুন

প্রথম আলোর শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

ধরে নিল কেন, ডাকলে তো নিজেই যেত: শামসের মা

প্রথম আলোর প্রতিবেদককে ‘তুলে নেওয়ার’ খবর

শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার খবরে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ

 কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে ‘রাষ্ট্রবিরোধী নাটক’ করেছে একটি সংবাদপত্র: শিক্ষামন্ত্রী