প্রথম আলোর প্রতিবেদককে ‘তুলে নেওয়ার’ খবর

গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামসুজ্জামান শামস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 06:11 AM
Updated : 29 March 2023, 06:11 AM

সাভারে দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর এসেছে।

সাভার থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলছেন, এরকম কথা তিনিও ‘শুনেছেন’। তবে সিআইডির ঢাকা বিভাগের ডিআইজি মো. ঈমাম হাসান বলেছেন, “এরকম কিছু ঘটেনি।”

গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামসুজ্জামান শামস। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামের ছোট ভাই তিনি।

জানতে চাইলে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোর ৪টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন বাসা থেকে শামসকে তুলে নিয়ে গেছে সিআইডি পরিচয়ধারীরা। এর প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় একটি বাসা নিয়ে থাকেন শামস। মঙ্গলবার রাতে শামসের সঙ্গে তার বাসায় ছিলেন একটি সংবাদমাধ্যমের সাভার প্রতিনিধি। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, শামসও এক সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেই সূত্রে ওই বাসায় তার যাতায়াত আছে। মঙ্গলবার রাতে শামসের ফোন পেয়েই তিনি ওই বাসায় যান। পরে রাতে সেখানেই থেকে যান।

“আমরা দুইজন দুই রুমে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৪টার দিকে উনি আমাকে ডেকে তোলেন, বলেন, ‘ওঠ, পুলিশ আসছে’। উঠে দেখি ঘরের ভেতর পাঁচজন। একজন শামস ভাইয়ের রুমে ঢুকেছেন। তার ফোন, ল্যাপটপ, একটা পোর্টবল হার্ডডিস্ক ততোক্ষণে তারা হাতে নিয়েছে।

“ওয়ারড্রব থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে তাতে সেগুলো ঢোকায় তারা। এরপর বলে যে ‘উনাকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি, একটু পরে কথাবার্তা বলে দিয়ে যাব’।”

৪৫ মিনিট পর তারা আবার বাসায় ফিরে আসেন জানিয়ে সেই সাংবাদিক বলেন, “ঘরের ভেতর তারা শামস ভাইয়ের ছবি তোলে। জব্দ মালপত্রের তালিকা করে। আমার ও বাড়িওয়ালার স্বাক্ষর নেয়। বাড়িওয়ালা জিজ্ঞেস করেছিল– তারা কারা। জবাবে তারা বলেছে, তারা সিআইডির লোক।”

দ্বিতীয়বার তারা যখন আসে, তাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এবং আশুলিয়া থানার এসআই রাজু মণ্ডলকে দেখার কথা বলেছেন ওই সাংবাদিক।

এ বিষয়ে কথা বলতে আশুলিয়া থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান ফোন করলে তিনি কল কেটে দেন। 

কী ঘটেছিল জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাকে ফোন করে বলেন, সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে কোথাও অভিযান চালাতে যাবেন, তিনি যেন তাদের পার করে দিতে সহায়তা করেন।

কিছুক্ষণ পর পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনকে ফোন করেন। তারা হোলি আর্টিজানে প্রাণ হারানো পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের স্ত্রী উম্মে সালমার বাসা চেনানোর কথা বলেন। উম্মে সালমা সাংবাদিক শামসের ভাবি, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত।

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, যেহেতু পুলিশের দলটি তাকে জানায় যে উম্মে সালমার কোনো সমস্যা হয়েছে, তাই তিনি তাদের সহায়তার জন্য উম্মে সালমার বাসার খোঁজ করছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা কর্মী তাকে ফোন করে জানান, পুলিশের দলটি আসলে উম্মে সালমার দেবর সাংবাদিক শামসকে খুঁজছে, হয়তো তাকে আটকও করেছে।

ওই খবর পেয়ে আমবাগান এলাকায় যাওয়ার কথা জানিয়ে সুদীপ্ত শাহীন বলেন, সেহরির সময় হয়ে যাওয়ায় শামসে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বটতলায় খেতে যান। সে সময় পুলিশের দলটিতে মোট ১৪ জন ছিলেন। এতজন সাদা পোশাকের পুলিশ বটতলায় গেলে কোনো ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে কিনা’ সেই আশঙ্কায় তিনি বটতলায় তাদের সঙ্গী হন। খাওয়া শেষে তিনি আর তাদের সঙ্গে যাননি।

যে ভবনে শামস থাকতেন, তার মালিকের নাম ফেরদৌস আলম কবীর। তিনিও ঘটনার একই ধরনের বিবরণ দিয়েছেন।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "রাত ৪টার ঠিক আগে আগে পাশের বাড়ির একজনকে সাথে নিয়ে কয়েকজন বাসায় এসে বলেন তারা সিআইডির লোক। তারা গেট খুলে দিতে বলেন, জানতে চান এখানে সাংবাদিক শামস থাকে কিনা।”

এরপর তাদের কথায় শামসের ফ্ল্যাটের দরজায় নক করে তাদের ডেকে তোলেন ফেরদৌস। তিনি বলেন, “তারা শামসের মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে তাকেসহ বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়, শামসকে নিয়ে তারা সেহরি খেতে বটতলায় যাচ্ছে।

“কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফিরে আসে। তখন ৬-৭ জন ছিল। একজনের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল। এরপর তারা শামসকে নিয়ে চলে যায়। আমবাগান এলাকার রাস্তাগুলো সরু। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি রেখে হেঁটে এই এলাকায় ঢুকেছিল।”