ছেলেকে নিয়ে উৎকণ্ঠিত এই সাংবাদিকের মা করিমন নেসা।
Published : 29 Mar 2023, 05:49 PM
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার খবর শুনে উৎকণ্ঠিত তার মা করিমন নেসা।
ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে কথা বলতে চাইলে শামস নিজেই যেত।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সাভারে কর্মরত সংবাদপত্রটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে বুধবার ভোররাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হয়।
পুলিশের কোনো সংস্থা শামসকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদককে ‘তুলে নেওয়ার’ খবর
কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বাধীনতা দিবসে ‘রাষ্ট্রবিরোধী নাটক’ করেছে একটি সংবাদপত্র: শিক্ষামন্ত্রী
সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় একটি বাসা নিয়ে থাকেন শামস। তার ভাই ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শামসের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়; সেখানে থাকেন তার মা। তিনি ছেলেকে তুলে নেওয়ার খবর পান সকাল ১০টায়।
দুপুরে সাটুরিয়া কাটিগ্রাম শামসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সব ঘর তালা মারা। উঠানে বসেছিলেন আমেনা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন নারী।
শামসের মায়ের চাচি শাশুড়ি আমেনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শামসের খবর পেয়েই ‘পাগলের মতো’ আচরণ করতে থাকেন তার মা। বুক চাপড়ে, কপাল চাপড়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন।
করিমন স্বামীকে হারান ২০০৬ সালে। দুই ছেলে তখনও ছাত্র। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলেকে ঘিরেই জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। বড় ছেলে রবিউল সহকারী পুলিশ সুপার হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে তার জীবনে। কিন্তু ২০১৬ সালে রবিউল মারা যাওয়ার পর শামসই তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
প্রতিবেশীরা বলেন, করিমনকে এমন কাঁদতে তারা দেখেছিলেন রবিউলের মৃত্যুর পর। তাই তারা ভয় পেয়ে যান।
আমেনা বেগম বলেন, তখন তারা করিমনের ভাইদের খবর দেন। তখন ভাই ইসমাইল হোসেন গাড়ি নিয়ে এসে করিমনকে তার বাড়ি ধামরাইয়ে নিয়ে যান।
ধামরাইয়ের ডাউটিয়া গ্রামে ইসমাইলের বাড়িতে ঢোকার আগেই করিমন নেসার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, “আল্লা আমার স্বামী নিছ, এক সন্তানরে নিছ। আমার এই সন্তানকে বুকে ফিরায় দাও আল্লাহ, আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনবো।”
শামসের বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
মামলা খবর শুনে করিমন নেসা বলেন, “আমার পোলায় কি চোর না ডাকাত? ওরে কীসের মামলায় দিছে।
“আর ওরে ধইরা নিল কেন, আমার ছেলেরে বললে তো নিজেই যাইতো, এমনি কইরা ওরে তুলে নিল ক্যান?”
করিমন নেসার ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, “দুর্ভাগ্য! আমার বোনটার পিছু ছাড়ছে না। বড় ছেলে যাওয়ার পর এই ছোট ছেলেই তার সবকিছু। ছেলের খবর শোনার পর থেকেই পাগলের মত আচরণ করছে ও।”