দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পুলিশের হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গত ২০ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হাজিরা দিতে দুই জঙ্গিকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। হাজতখানায় নেওয়ার পথে অন্য জঙ্গিরা তাদের ছিনিয়ে নেয়।
জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই জঙ্গি আনসার আল ইসলাম সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।
মন্ত্রী বলেন, “কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে জঙ্গিরা থাকে। এ জঙ্গিদের নিয়ে আপনারা যেমন উদ্বিগ্ন আমরাও তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটা পরিকল্পনা করেই ওই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে; যেখানে আমাদের দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতার ফাঁক-ফোকর দিয়েই এরা বেরিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, এ দুর্বলতাটা কে তৈরি করেছিল, কারা এজন্য দায়ী, কারা এই সুযোগ-সুবিধা ওভারলুক করেছে কিংবা কার গাফিলতি আছে, সেগুলোর জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“এই কমিটির প্রতিবেদন আমাদের কাছে এখনও পৌঁছয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
কারাগার থেকে আসামি স্থানান্তরের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখানেও কারও কোনো রকম গ্যাপ আছে কিনা তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। আইজি (প্রিজন্স) এ কারাগারে এসে পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখছেন যে এখানকার কোনো গ্যাপ আছে কিনা বা কোনো গাফিলতি-দুর্বলতা আছে কিনা।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৬০তম কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্নকারীদের শপথ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কারাগারে আটক বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল কারাগার এ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে।
তিনি জানান, কারাগারে বন্দিদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বিক্রয়লদ্ধ অর্থ হতে ৫০ শতাংশ বন্দিদের মজুরি হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে; যা বন্দিরা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারছেন। কারাবন্দি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মেয়াদের ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক উৎকর্ষ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি ছাড়াও ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কারাগার থেকে আসামি স্থানান্তরের সময় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করবেন। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন।
গত ২৯ মে ৬ মাস মেয়াদি এ প্রশিক্ষণে ৩০১ জন নবীন কারারক্ষী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী হোসেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক, মো. জাহাঙ্গীর কবির, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, প্রশিক্ষণের প্রধান ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আমিরুল ইসলাম, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: