জঙ্গি ছিনতাই: কোথাও গাফিলতি ছিল, বলছেন মন্ত্রী

“আমারতো মনে হয়, এটা প্ল্যান করে করেছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে পরিকল্পনা করছে, ট্রায়াল দিয়েছে," বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 08:40 AM
Updated : 21 Nov 2022, 08:40 AM

আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডের আসামি দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ‘কোথাও গাফিলতি রয়েছে’ বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেছেন, “পরিকল্পনা করে, রেকি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করা হবে।”

রোববার ভরদুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

শামীম ও সিদ্দিক দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।

এ ঘটনায় ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’।

পুলিশ পাহারার মধ্য থেকে এভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করছেন, এ ঘটনায় পুলিশের ‘অবহেলা ও অপেশাদারিত্ব’ ছিল।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্তটা করতেছি, দেখি কার দোষ আছে। নিশ্চয় ল্যাপস আছে, নিশ্চয় কোনো ঘটনা ঘটেছে। আমারতো মনে হয়, এটা প্ল্যান করে করেছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে পরিকল্পনা করছে, ট্রায়াল দিয়েছে।"

পালিয়ে যাওয়া দুজনকে ধরতে কোনো অগ্রগতি হল কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “উঁচু দরের জঙ্গি এরা… আমরা ফলো করতেছি। ছোট ছোট ধরেই আগাতে হয়, মানে এরা অনেক উঁচু দরের জঙ্গি, অনেক চেষ্টা করে ধরা হয়।"

এদিকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ‘হোতা’ হিসেবে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কথা বলছে পুলিশ। পুরস্কার ঘোষণা করেও তাকে ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশের দুর্বলতা না অবহেলা?

Also Read: আদালত প্রাঙ্গণে ‘পুলিশকে স্প্রে মেরে’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাই

Also Read: যেভাবে ছিনতাই ২ জঙ্গি

পুলিশ দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছে; ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডেও পাঠিয়েছে আদালত। 

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- শাহিন আলম, শাহ আলম, বিএম মজিবুর রহমান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, খায়রুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ, আব্দুস সবুর ও রশিদুন্নবী।

এদের মধ্যে আরাফাত ও সবুরকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে।

তবে জঙ্গিরা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাত ও সবুরকে ছাড়াতে পারেনি।