Published : 28 Apr 2025, 02:14 PM
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ‘অভয়ারণ্য পাঠাগার’ থেকে ‘লুট’ হওয়া প্রায় ৪০০ বই আবার তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
রোববার রাত ৯টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘সব বই-পুস্তক’ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাগার কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন।
অভয়ারণ্য পাঠাগার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ধনবাড়ী উপজেলার বাঁশহাটি এলাকার ঢাকা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ‘অভয়ারণ্য পাঠাগারের’ অবস্থান। ‘নাস্তিক’ লেখকদের বই রাখায় ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠে যুব খেলাফত মজলিসের এক নেতার বিরুদ্ধে।
‘অভয়ারণ্য’কে বই বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ৪০০ বই লুট এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঠাগার বন্ধের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ হলরুমে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়।
টানা দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকে ধনবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েম ইমরান, ধনবাড়ী থানার ওসি এস এম শহিদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি খায়রুল মুন্সি, উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান, অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র, সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ স্লোগানে ২০১৫ সালে অভয়ারণ্য পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০২২ সালে একবার এই পাঠাগারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এবার সেখান থেকে বই ‘লুটের’ ঘটনা ঘটল। বই লুটপাটের ঘটনায় শুক্রবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন ‘অভয়ারণ্য পাঠাগার’ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, “ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোন জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভন্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।”
ওইদিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এ সময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। তারা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় করে নিয়ে যায়।
পাঠাগারে 'নাস্তিকদের' বই: ৪০০ বই 'লুট', পরে জমা ইউএনও কার্যালয়ে
পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার পর যুব খেলাফত মজলিসের নেতা ফেইসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন- “জয়বাংলা কর্মসূচী। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।”
বই ফেরত পাওয়ার পর অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। উনারা আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করলে সব কিছুর সমাধান হয়। উনারা আমাদের লুট হওয়া ৪০০ বই চার-পাঁচটি বস্তায় ভরে ফেরত দিয়েছে৷
“পাঠাগার একটি পবিত্র স্থান। জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্ম চর্চার জন্য সব ধরনের বইয়ের সমাহার থাকবে। আমাদের এখানে কোনো নিষিদ্ধ বই বা নাস্তিক লেখকদের বই নেই।”
বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন বলেন, “আগেই বলেছি, আমরা ভুলি করেছি। এ কারণেই বইগুলো ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে আমরা বৈঠকে বসার পরে ইউএনও আমাদের বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর না হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন মাহমুদ বলেন, “উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। সভায় উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পাশাপাশি থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। পরে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে বইগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।”