চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ সাটু কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে পুলিশের সুধী সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
Published : 27 Apr 2025, 09:39 PM
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পুলিশের সুধী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে বাধা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকালে শহরের নিউমার্কেট এলাকার শহীদ সাটু কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এ ঘটনার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তরিকুল আলম বক্তব্য শেষ না করেই আক্ষেপ নিয়ে অডিটরিয়াম থেকে বের হয়ে যান। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক সহকারী কমান্ডার।
তাকে বক্তব্যে বাধা দিয়েছেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির লতিফুর রহমান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
এ ঘটনার সময় জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান।
এছাড়া সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সংগঠন, পরিবহন মালিক সমিতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, সাংবাদিক, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত আড়াইশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। একে একে একজন বিএনপি নেতা, একজন পরিবহন মালিক সমিতির নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন নেতা বক্তব্য দেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বক্তব্য দিতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলম।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে ৫ অগাস্টের সফলতা কামনা করা আমাদের ভুল হবে।”
এ কথা বলার পর পরই সামনের সারিতে বসে থাকা জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান। তিনি হইচই শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল থেমে যান। তারপর আবার কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু হইচইয়ের কারণে বলতে পারেনি।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান আঙ্গুল উঁচিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুলের দিকে কথা বলছেন এবং একপর্যায়ে নিজের অবস্থান ছেড়ে কিছুটা সামনে তেড়ে আসেন। তখন সেখানে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যরা তাকে নিবৃত্ত করেন।
এসময় জামায়াতের নেতা লতিফুরকে বলতে শোনা যায়, “এত বড় বিপ্লবকে কেন ছোট করবেন?”
প্রতি উত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেননি। তখন জামায়াতের ওই নেতা চিৎকার দিয়ে বলেন, “৫ অগাস্টকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না।”
তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশে বলেন, “খবরদার আপনি ওই কথা বলবেন না।”
তিনি মুক্তিযোদ্ধা তরিকুলের হাতে থাকা মাইক্রোফোন নিয়ে নিতে বলেন। তখন একজন পুলিশ সদস্য এসে মাইক্রোফোন নিয়ে নেন।
তখন তরিকুলকে বলতে শোনা যায়, “আমি কী বলতে চেয়েছিলাম, তা বলতে দেওয়া হল না। আমার বক্তব্য শেষ করতে দেওয়া হল না।”
তারপরই তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে বেরিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ ঘটনার সময় অন্য কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এরপর অনুষ্ঠানটি আরও প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শেষ হয়। তখন আর বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলেননি।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান বলেন, “জেলা পুলিশ সুধী সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে বক্তব্য রাখার আহ্বান করেন। এ বিষয়ে অনেকে বক্তব্য দেন। জনৈক আওয়ামী লীগ নেতা (তরিকুল আলম) সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কথা না বলে, তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও ৫ অগাস্টের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
“জেলার আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গের বাইরে তার এ বক্তব্যে বিএনপি, ছাত্র সমন্বয়ক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন প্রতিবাদ করে। এ সময় পরিবেশ শান্ত রাখতে আমি তাকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে বলি। আমিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, শহীদ পরিবারের একজন। এ বিষয়টিকে অনেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। এটা দুঃখজনক।”
মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল বলেন, “আমি কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করি না। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবই। তাই বলে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনকে অস্বীকার করি না।
“যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধা করি। আহত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি আছে। কিন্তু আমাকে এ কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের মোবাইলে বিকালে একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা ধরেননি।