জানাজায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা রিজভী ও এনসিপি নেতা সারজিস আলম দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান।
Published : 28 Apr 2025, 01:08 AM
দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করা সেই কিশোরীর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক শোকাহত পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্বজনসহ কাছের মানুষদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রোববার সন্ধ্যার পর সাঁঝের আলোয় লাশ হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন এই কিশোরী, যার বাবা জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ঢাকায় গুলিতে আহত হওয়ার ১০ দিন পর মারা গিয়েছিলেন।
জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
দুমকিতে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী শনিবার রাতে ঢাকায় আত্মহত্যা করেন বলে জানায় পুলিশ।
রোববার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে।
এদিন সাড়ে ৭টায় এ কিশোরীর লাশবাহী গাড়িটি দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঙ্গাসিয়ায় তার গ্রামের বাড়ি রাজগঞ্জে পৌঁছায়। পরে পাঙ্গাসিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয়রা অংশ নেন।
জানাজার আগে রিজভী বলেন, ”এ কিশোরী যখন তার নিরাপত্তার কথা বলছিল, সে যখন তার বিচার চাচ্ছিল তার উৎপীড়নের সেই বিচারিক প্রক্রিয়া তরান্বিত হলে আজকে হয়তো তার জীবনটি চলে যেত না।
“যেজন্য এত ছাত্র-শ্রমিকের জীবন চলে গেল সেই আইনের শাসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। তার মৃত্যু আজ গোটা জাতির কাছে একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “যে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি জুলাই অগাস্টের মহাবিপ্লবে জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে যিনি বুলেট বরণ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই শোক কাটতে না কাটতেই সেই পরিবারে আরেক শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল।”
রিজভী বলেন, “আজকে এই যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামে এসে আপনাদের সামনে মুক্ত কন্ঠে দুটি কথা বলার যে সাহস পাচ্ছি, সেই সাহসটুকু যুগিয়েছে তার বাবা। তাদের মত আরও অনেকের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকের আমরা মুক্ত পরিবেশ আমরা পেয়েছি।”
সারজিস আলম বলেন, “কিছু নরপিশাচের ছোবল থেকে আমরা আমাদের বোনকে রক্ষা করতে পারিনি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা। কোনো বোনকে এভাবে যেন আমাদের আর না হারাতে হয়। এ ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তাই অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি। এই খুনিদের আগামী ৯০ দিনের ভিতর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখতে চাই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এই কিশোরীর বাবা। ১০ দিন পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এর মধ্যে গত মাসে পটুয়াখালীর দুমকিতে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি।
দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় ২০ মার্চ দুজনকে আসামি করে মামলা করে কিশোরী।
আসামিদের একজন জনতা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শাকিব মুন্সি (১৯); আরেকজন স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে।
ওইদিন রাতেই শাকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আরেক আসামিকেও পরদিন আইনের আওতায় নেওয়ার কথা পুলিশ জানিয়েছিল।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, তার বাবাকে পটুয়াখালীতে দাফন করা হয়। বাবার কবর জিয়ারত করার পর নানা বাড়ি যাওয়ার সময় দুমকি থানা এলাকায় আসামিরা মেয়েটির পিছু নেয়। এক সময় হঠাৎ মুখ চেপে ধরে তাকে সড়কের পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। তারা ধর্ষণের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে আলোচিত ওই ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করে সমাজের নানা জায়গা থেকে আন্দোলন-প্রতিবাদ হয়, কিন্তু তাতে মেয়েটির আত্মহত্যা ঠেকানো যায়নি।
কিশোরীটির চাচা বলেন, "সে অত্যন্ত সাহসী মেয়ে ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে বুক চিতিয়ে লড়েছিল। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ তাকে ভেঙে দিল। আজ সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।"
দুমকি থানার ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ”মামলার আসামীদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই কিছু প্রকাশ করতে চাইনা। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করব।”
আরও পড়ুন:
'মেয়েটির বাড়ি যাওয়ারই কথা ছিল'
'ধর্ষণের শিকার' পটুয়াখালীর কিশোরীর জানাজায় অংশ নেবেন রিজভী