ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মেয়েটি শনিবার রাতে ঢাকায় ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 27 Apr 2025, 03:57 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত বাবার কবর জিয়ারত করতে পটুয়াখালী দুমকি গিয়ে ধর্ষণের শিকার সেই কিশোরীকে গ্রামের বাড়িতেই দাফন করা হবে। তাকে তার বাবার কবরের পাশেই শায়িত করা হবে।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মেয়েটি শনিবার রাতে ঢাকায় ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করার কথা জানায় পরিবার। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তার লাশ নিয়ে পটুয়াখালী রওনাও হয়েছে স্বজনরা।
এর মধ্যে কবর খোঁড়া ও জানাজার স্থান প্রস্তুতের কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী কিশোরীর দাদা।
এদিকে কিশোরীর জানাজায় অংশ নিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পটুয়াখালী আসছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে দলটি।
জেলা বিএনপির নেতা ও পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতের পিপি মজিবুর রহমান টোটন বলেন, “রিজভী ভাই এর মধ্যে বরিশালে পৌঁছেছেন এবং কিশোরীর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে জানাজায় অংশ নেবেন তিনি।”
এর আগে, শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় লামিয়ার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এই কিশোরীর বাবা। ১০ দিন পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পরে এ বছরের মার্চেপটুয়াখালীর দুমকিতে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় ধর্ষণের শিকার হন মেয়েটি।
দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় ২০ মার্চ দুজনকে আসামি করে মামলা করেন কিশোরী।
আসামিদের একজন জনতা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শাকিব মুন্সি (১৯) এবং অন্যজন স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র (১৭)।
ওইদিন রাতেই প্রধান আসামি শাকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আরেক আসামিকেও পরদিন আইনের আওতায় নেওয়ার কথা পুলিশ জানিয়েছিল।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, তার বাবাকে পটুয়াখালীতে কবরস্থ করা হয়। বাবার কবর জিয়ারত করার পর নানা বাড়ি যাওয়ার সময় দুমকি থানা এলাকায় আসামিরা মেয়েটির পিছু নেয়। এক সময় হঠাৎ মুখ চেপে ধরে তাকে রাস্তার পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে তারা। ধর্ষণের ঘটনার ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়।
আলোচিত ওই ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করে আন্দোলনের নেতারা বিভিন্ন সময় বিবৃতিও দিয়েছেন।
মেয়েটি ঢাকার আদাবর থানা এলাকার শেখেরটেকে পরিবারের সঙ্গে থাকছিল। শনিবার রাতে সেখানেই সে আত্মাহুতির পথ বেছে নেয় বলে আদাবর থানার ওসি এস এম জাকারিয়া জানান।
মেয়েটির চাচা বলেন, "সে অত্যন্ত সাহসী মেয়ে ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে বুক চিতিয়ে লড়েছিল। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ তাকে ভেঙে দিল। আজ সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।"
পটুয়াখালীর দুমকি থানার ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটির ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”