যাদের ছকে জঙ্গি ছিনতাই, তারা ‘চিহ্নিত’

পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকেও দ্রুত ধরে ফেলার আশা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 07:24 PM
Updated : 21 Nov 2022, 07:24 PM

আদালত পাড়া থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে, কারা করেছিল, তার সবই জেনে ফেলার দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা তাদের ‘নজরদারিতে’ রয়েছে।

ওই দুই জঙ্গিকে যত দ্রুত সম্ভব ধরে ফেলার আশা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আনসার আল ইসলামের সদস্য দুজনকে তাদের সহযোগীরা ছিনিয়ে নেওয়ার একদিন পর সোমবার এমন আশাবাদ প্রকাশ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি হলেন- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।

তারা দুজনই প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। সোহেল লেখক অভিজিৎ রায় হত্যামামলায়ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।

জনাকীর্ণ আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশকে পেপার স্প্রে ছুড়ে ও পিটিয়ে জঙ্গিদের মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব পালন এবং গোয়েন্দাদের তৎপরতা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশের দুর্বলতা না অবহেলা?

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: কোথাও গাফিলতি ছিল, বলছেন মন্ত্রী

Also Read: দুই জঙ্গি ছিনতাই: পাঁচ পুলিশ বরখাস্ত

এই ঘটনায় কারও গাফিলতি ছিল বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মনে করছেন। ইতোমধ্যে পাঁচ পুলিশকে বরখাস্তও করা হয়েছে।

পালিয়ে যাওয়া দুজনকে ধরতে কোনো অগ্রগতি হল কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুপুরে বলেন, “উঁচু দরের জঙ্গি এরা… আমরা ফলো করতেছি। ছোট ছোট ধরেই আগাতে হয়, মানে এরা অনেক উঁচু দরের জঙ্গি, অনেক চেষ্টা করে ধরা হয়।”

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মলনে এসে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “সব কিছু মিলিয়ে তদন্ত চলছে, আমরা মনে করি আসামিরা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।”

এরপর সন্ধ্যায় সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও অভিযানে যারা যারা ছিল, তা এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

“তাদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করা আমাদের মূল লক্ষ্য,” বলেন তিনি।

কারও নাম প্রকাশ না করে আসাদুজ্জামান বলেন, “এই ঘটনায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছে, তার নাম আমরা পেয়েছি। তার সাথে অন্য যারা ছিল, তাদের নামও পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।”

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন আনসার আল ইসলামের শীর্ষনেতা সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া।

তবে অভিযানে জিয়া ছিলেন না বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান আসাদুজ্জামান।

মামলায় আরও বলা হয়, আয়মান ওরফে মশিউর রহমান নামে একজনের নেতৃত্বে জঙ্গি ছিনতাইয়ের অভিযান চলে।

“আয়মানের নেতৃত্বে আদালত এলাকায় সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামসেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬), ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের উপর আক্রমণ করে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল,” বলা হয় এজহারে।

২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা তাদের তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ধরা পড়লেও বাকি দুজনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ওই দুজনের মধ্যে একজন ভারতে ধরা পড়লেও সালাউদ্দিন সালেহীন এখনও অধরা।

এবার জঙ্গিরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যেকটা পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেন পলাতক জঙ্গিরা নিরাপত্তার ফাঁকে পালিয়ে যেতে অথবা কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে।”

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নতুন কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা জানতে এই অভিযানে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সিটিটিসি প্রধান।

“এই ঘটনা বিষয়ে আরো বড় কিছু থাকলেও থাকতে পারত। তবে যারা অপারেশন প্ল্যানে ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো প্ল্যানটাই জানা যাবে।”

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র সঙ্গে আদালত পাড়া থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ায় জড়িতদের যোগসূত্র রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয় আসাদুজ্জামানের কাছে।

তিনি বলেন, “আনসার আল ইসলামের সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে। তবে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার অপারেশনের সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা এখনও মেলেনি।”

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি তৈরি হয়েছে।