পলাতক জিয়ার নির্দেশনায় জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশ

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত জিয়াকে দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজছে পুলিশ, কিন্তু আনসার আল ইসলামের এই শীর্ষ নেতা এখনও অধরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 07:50 PM
Updated : 20 Nov 2022, 07:50 PM

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার হোতা হিসেবে পলাতক সৈয়দ জিয়াউল হককে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর জিয়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে আসছে।

আর যে দুই জঙ্গিকে রোববার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেই মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবও একই সংগঠনের সদস্য।

তারা দুজনই প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। ওই মামলায় জিয়াও একই দণ্ডে দণ্ডিত। তবে তিনি পলাতক।

দুপুরে জনাকীর্ণ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ মামলা করেন।

সেই মামলায় বলা হয়, জিয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালিয়েছিল জঙ্গিরা।

এদিন মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ১২ জঙ্গির আদালতে হাজিরার দিন ধার্য ছিল, যা জেনে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল বাইরে থাকা তাদের সহযোগীরা।

মামলায় বলা হয়, “আয়মানের নেতৃত্বে আদালত এলাকায় সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামসেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬), ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের উপর আক্রমণ

করে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

“এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দুটি মোটর সাইকেলযোগে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন আনসার ইসলামের সদস্য এবং আদালতের আশেপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা ১০-১২জন সিএমএম আদালতের সামনে অবস্থান করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”

এদিন সকাল ৮টার কিছু পরে কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২ জনকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। বেলা পৌনে ১০টার দিকে এসআই মহিউদ্দিন পাল তার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল মো. আজাদ, মো. শরীফুল, মো. ছাত্তার আসামিদের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮ এ নিয়ে যায়।

“ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সিএমএম কোর্টের হাজতখানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কনস্টেবল আজাদ আসামি মইনুল হাসান শামিম সিফাত ও সামির ওরফে ইমরান (২৪) এবং আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), আরাফত রহমান (২৪), আব্দুস সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজন (২১)সহ রওয়া দেয়।

বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র দুটি মোটর সাইকেল যোগে আসা অজ্ঞাত ৫-৬ জন হামলা চালায় বলে এজহারে বলা হয়।

“কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য আজাদ তাদের বাধা দিয়ে অজ্ঞাতনামা হামলাকারীদের একজন তার হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি সরে যান এতে তার মুখে লেগে নাক এবং মুখে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়।

Also Read: যেভাবে ছিনতাই ২ জঙ্গি

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: ‘ভালো তথ্য’ পেয়েছি, বললেন ডিএমপি কমিশনার

“কনস্টেবল আজাদের ডাক-চিৎকারে আশেপাশে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যসহ সিজেএম কোর্টে গেইটের নিরাপত্তারক্ষী তারেক জিয়া (২১)এগিয়ে আসলে তাদের চোখ-মুখ লক্ষ্য করে অজ্ঞাতনামা আসামিরা তাদের হাতে থাকা পেপার স্প্রে করে। এতে দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই সুযোগে মইনুল ও সোহেলকে নিয়ে তারা মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।”

আরাফাত ও সবুর পুলিশ সদস্যদের কিল-ঘুষি লাথি মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অন্য পুলিশ সদস্যরা এসে তাদের ধরে ফেলে বলে এজাহারে বলা হয়।

ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা একটি মোটর সাইকেল ফেলে যায় বলেও মামলায় বলাা হয়েছে।

রোববার মোহাম্মদপুর থানার মামলায় যাদের হাজিরা ছিল, তাদের নাম দেওয়া হয়েছে এজাহারে। পলাতক মইনুল ও সোহেল ছাড়া অন্যরা হলেন- মাহিন আলম ওরফে কামাল, শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন (২৬), বিএম মজিবুর রহমান (২৭),  সুমন হোসেন পাটোয়ারী ওরফে সাকিব ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল (২০), খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান (২৪), মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন ওরফে সাহরিয়ার (২৫), আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস(২৪), শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু উমায়ের (২৭), মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সুজন (২১), মো. রশিদুন্নবী ভূঁইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রাইহান (২৬)।

ওই মামলায় জামিনে থাকা আসামি ঈদী আমিন (২৭)এবং মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিরও (২৪) এদিন হাজিরার দিন ছিল।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২২ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন।