মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে আকুল ছিলেন ডেক ক্যাডেট সাব্বির

মা-বাবার ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলার আকুলতা বোনকে জানান সাব্বির।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 11:11 AM
Updated : 13 March 2024, 11:11 AM

বাড়িতে মা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেছিলেন ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন। কিন্তু তাদের ফোন বন্ধ থাকায় বোনকে জানান। কিন্তু পরে আর সাব্বিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি তারা।

ততক্ষণে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে তারা জেনেছেন, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে।

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে ২৩ নাবিককে জলদস্যুরা জিম্মি করেছে, তাদের মধ্যে সাব্বির একজন।

সাব্বির টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। খবরটি জানাজানির পর থেকে সাব্বিরের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।

একমাত্র ছেলের জিম্মির খবর শুনে বাবা হাউমাউ করে কাঁদছেন; আর বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম।খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিলেও তাদের কান্না থামছে না।

সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা বলেন, সাব্বিররা দুই ভাই-বোন। অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না থাকায় সাব্বির ছোটবেলা থেকেই তার মামার বাড়ি সহবতপুর ইউনিয়নের কাজির পাচুরিয়ার এলাকায় থাকতেন এবং সেখানেই লেখাপড়া করেছেন।

সাব্বির সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে চাকরি নেন।

রানা বলেন, “সাব্বিরের বাবা প্যারাইলাইজড। সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবতপুর বাবার বাড়ি বসবাস করেন।

“বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শ্বশুর বাড়ি থাকেন। ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না।”

সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, “ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ সোমবার কথা হয়েছে। এর আগে আমার ফোনে তার মাথা ন্যাড়া করার ছবি পাঠিয়েছে। সাগরের কি যেন রেখা অতিক্রম করার পর জুনিয়রদের মাথা ন্যাড়া করতে হয়। এটা নিয়ে আমরা ভাই-বোন হাসাহাসি করেছি।

“পরে বিকালে আবার ফোন করে সাব্বির। বলল- বাড়িতে বাবা-মার সাথে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ। বাবা এবং মায়ের সঙ্গে কথা বলার আকুলতা ছিল অনেক। পরে আর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সাব্বির।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিতু বলেন, “জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে এমন খবর গণমাধ্যমে দেখার পর তার ফোনে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। বাবা মা এখন শুধু কাঁদছে, সান্ত্বনাও দিতে পারছি না। সরকার থেকেও কোনো সুখবর পাচ্ছি না। আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই।”

ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন মিতু। তার ভাই যেন জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে তাদের কাছে আবার ফেরত আসে। সাব্বিরকে ফেরত পেতে সরকারের কাছেও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জলদস্যুরা। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি দস্যুদের কবলে পড়ে।

সহবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফায়েল মোল্লা বলেন,

“টিভিতে দেখলাম তাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তারা জাহাজ সোমালিয়ায় নিয়ে গেছে।

“গতকাল দুপুর থেকেই সাব্বিরের ফোন বন্ধ। কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। এখনও পরিবারের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। মুক্তিপণ চেয়েছে কি-না সরকারের কাছে তাও জানি না । “

একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বিরের কিছু হয়ে গেলে তার পরিবারটির আর চলার উপায় থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “যতদ্রুত সম্ভব সাব্বিরসহ সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই সরকারের কাছে।”

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, “সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। আশা করি দ্রুত সুখবর পাওয়া যাবে।”

আরও পড়ুন

Also Read: এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

Also Read: ছিনিয়ে নেওয়া ইরানি ট্রলারে করে এসে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি

Also Read: জাহান মণি থেকে আবদুল্লাহ: ২৩ নাবিকের মুক্তি মিলবে কীভাবে

Also Read: জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা

Also Read: জলদস্যুর কবলে জাহাজ: এমভি আবদুল্লাহে জিম্মি যারা

Also Read: জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি