আব্রাহাম লিংকন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, কুড়িগ্রামে আনন্দ

দুই বছর আগে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের রাখায় একুশে পদকে পেয়েছিলেন আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার এ আইনজীবী।

আহসান হাবীব নীলুকুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 02:54 PM
Updated : 15 March 2024, 02:54 PM

একুশে পদক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় এবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাচ্ছেন আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন; সেই খবরে কুড়িগ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শুক্রবার চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য দশজনের নাম ঘোষণা করে। আব্রাহাম লিংকন এ পুরস্কার পাচ্ছেন সমাজসেবায় ‘বিশেষ অবদানের’ জন্য।

সেই খবরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকে ছবি পোস্ট করছেন।

আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলায় আইনি সহায়তা দিয়ে সবার নজরে আসেন এ আইনজীবী। ২০২২ সালে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে আব্রাহাম লিংকন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

আব্রাহাম লিংকন একজন লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে ১৬টি গ্রন্থ তার লেখা।

বাংলা অ্যাকাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক লিংকন ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং জেলা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন আব্রাহাম লিংকন। ১৯৮৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৯০ সালে সিনেট সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ে বেতন ছাড়াই ৩২ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন আব্রাহাম লিংকন। পাশাপাশি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সীমান্ত-হত্যার বিরোধিতাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আব্রাহাম লিংকন ২০১২ সালে নিজ শহরে গড়ে তোলেন ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। সেখানে রয়েছে খেতাবপ্রাপ্ত ও খেতাবহীন কিছু মুক্তিযোদ্ধার সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহৃত গুলি, গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম-ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং পাঁচ হাজার ৮৬৫ জন রাজাকারের তালিকা। সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রী।

সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর। লিংকনের দান করা ১৮ শতক জমিতে সরকারি উদ্যোগে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন চারতলা ভবন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। কাজ করছি মানুষের কল্যাণে। বিচারকমণ্ডলীকে ধন্যবাদ আমি তৃণমূলে থাকলেও তারা আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সম্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরও বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করল। আমার এ অর্জন এ জনপদের মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম।”

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন কাজী আবদুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু নইম মো. নজিবউদ্দিন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর)।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছেন ড. মোবারক আহমদ খান।

চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ও ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুনকে রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

সমাজসেবা/জনসেবায় আব্রাহাম লিংকন ছাড়াও অরণ্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।

আগামী ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক তাদের হাতে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

আরও পড়ুন:

Also Read: বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ-গীতিকার রফিকউজ্জামানসহ ১০ জন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার