মোজাব্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজটি হাইজ্যাক করে; যেখানে ২৩ নাবিক আছেন।
Published : 13 Mar 2024, 07:58 PM
‘বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে’, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি এক নাবিক তার পরিবারকে শেষবার এই বার্তা দিয়েছেন বলে জানান স্বজনরা।
২৯ বছর বয়সি মো. আনোয়ারুল হক রাজু এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের এবিল সি-ম্যান (নাবিক)। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে।
দস্যুদের হাতে জিম্মি রাজুসহ ২৩ নাবিককে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
সাত বছর থেকে রাজু জাহাজে কর্মরত। গত বছরের জুলাইয়ে রাজু ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজু তৃতীয়।
সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর মোবাইল ফোনে কয়েক বার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজু।
রাজুর ছোট ভাই মো. জিয়াউল হক রনি বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ঘটনাটি জানায় ভাই। যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে চট্টগ্রাম অফিসে ফোন দিলে তারা জানান জাহাজ হাইজ্যাক হয়েছে।
“সন্ধ্যার সময় আমাদেরকে ফোন দিয়ে ভাই জানান, তাদের জাহাজ হাইজ্যাক হয়েছে। জলদস্যুরা জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাত ১০টার দিকে আবারও ফোন দিয়ে বলে, ওখানে যেতে তাদের দুই থেকে আড়াই দিন লাগবে।
“হয়ত ওখানে নিয়ে গেলে আর যোগাযোগ করতে পারবে না। সেখানে নিয়ে তাদেরকে জলদস্যুদের আরেক পক্ষের হাতে তুলে দেবে বলে জানিয়েছেন ভাই (রাজু)। ফোন রাখার আগে সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন।”
‘বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে’, নিজ এলাকার বন্ধু ইমরানকে পাঠানো এক ভয়েজ ম্যাসেজে রাজু এ বার্তা দিয়েছেন।
ইমরান বলেন, “রাতে অন্য একটি ভয়েজ ম্যাসেজে রাজু জানিয়েছে তাদের সবাইকে একটি জায়গায় আটক করে রাখা হয়েছে। সেহেরির জন্য সামান্য খাবার দিয়েছে, তারা খুব ভয়-ভীতির মধ্যে আছে।”
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাংলাদেশ শিপিং কোম্পানির কবির স্টিলে চাকরি করে। চার মাস আগে সে জাহাজে উঠে। জাহাজটা মোজাব্বিক থেকে দুবাই আসতেছিল। পথে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটিকে হাইজ্যাক করে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। জলদস্যুরা জাহাজটি তাদের আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান রাজু।
দস্যুরা মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে; দ্রুত তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজুর বাবা।
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “প্রতিদিন এশার নামাজের পর মোবাইল ফোনে ছেলের সঙ্গে কথা হত। কিন্তু আজ দস্যুদের হাতে আমার ছেলে জিম্মি। সরকারের কাছে আবেদন, দ্রুত আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।”
বুধবার বিকালে জাহাজের মালিক এস আর শিপিংয়ের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।”
আরও পড়ুন:
এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা
এমভি আবদুল্লাহ: উৎকণ্ঠায় তারেকুলের পরিবার, থামছে না মায়ের কান্না
জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা
টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা