এমভি আবদুল্লাহ: উৎকণ্ঠায় নাবিকদের স্বজনরা

নাবিক নুর উদ্দীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “বলছে ‘আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়া হচ্ছে, আল্লাহর কাছে দোয়া কর। মুক্তিপণ না দেয়া হলে আমাদের একজন একজন করে শুট করা হবে’।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 01:32 PM
Updated : 13 March 2024, 01:32 PM

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়ার পর থেকেই শঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের স্বজনরা।

বুধবার নাবিকদের স্বজনরা জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিংয়ের কার্যালয়ে গিয়ে তাদের শঙ্কা আর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।

সোমালিয়ার জলদস্যুরা মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের কয়লাবাহী জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে।

১৪ বছর আগে একইভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণির মত এমভি আবদুল্লাহও বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ।

বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের স্বজনরা। সেখানে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন; জানান উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা।

জাহাজের নাবিক নুর উদ্দীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার দুপুরে নুর উদ্দীন তাকে ফোন করে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানান। এরপর সন্ধ্যায় ভিডিওকলে কান্নাকাটি করে ছেলেকে দেখতে চান।

কান্নাজড়িত কন্ঠে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “সন্ধ্যায় লাস্ট দুইটা ভয়েস পাঠিয়েছে। বলছে ‘আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়া হচ্ছে, আল্লাহর কাছে দোয়া কর। মুক্তিপণ না দেয়া হলে আমাদের একজন একজন করে শুট করা হবে’।”

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বে থাকা তানভীর আহামেদের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, “গতকাল রাত ৮টার দিকে ফোন করে বলেছিল তখনও ইফতার হয়নি।

“বলেছে- ‘আমাদের কিছুক্ষণ পর নিয়ে যাবে, আমাদের জন্য দোয়া কর। কেমনে আমাদের ছাড়ানো যায় সেটার ব্যবস্থা কর। তারা এখনও পর্যন্ত আমাদের গায়ে হাত তোলেনি’। আমাদের জাহাজে পানি নাই। ওখানে নিয়ে যাওয়ার পর পানি দেয় কিনা সেটাও জানি না। সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে বসাচ্ছে’।”

বুধবার সকাল ৭টার দিকে নাবিক আইনুল হকের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার মা লুৎফে আরা বেগমের সঙ্গে।

লুৎফে আরা বেগম বলেন, “তার কথা শুনে মনে হয়েছে কোথাও বসে লুকিয়ে লুকিয়ে সে আমাকে ফোন করেছে। সে জানিয়েছে তাদের জাহাজটি সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

মঙ্গলবার দুপুরে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর আইনুল ফোন করে খবর দিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “দুপুর একটার দিকে আমাকে ফোন করে বলেছে- জাহাজে ডাকাত পড়েছে, অফিসে ফোন করে সেটি জানাও। ওইসময় সে খুব কান্না করছিল।”

জলদস্যুদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।

“তাদের একটা কৌশল হলো জাহাজ ক্যাপচার করার পর তারা সেফ জোন তৈরি করে। তারপর সেখান থেকে নিজেদের ডিমান্ড জানায়। আমাদের প্রথম প্রায়োরেটি হলো নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করা। তারপর জাহাজ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা।”

২০১০ সালে তাদের এমভি জাহান মণির নাবিকদের ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি মিজানুল বলেন, “আমাদের আগের একটি অভিজ্ঞতা আছে। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এটিও উদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি।”

মালিকপক্ষ থেকে নাবিকদের স্বজনদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

Also Read: এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

Also Read: এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা