‘ফোনটা নিয়া যাইবগা আর কথা কওন যাইব না, এইডাই শেষ কথা’

“কত আদরের ছেলে আমার। ঋণ করে ছেলেডারে পড়াইছি। অহনো ঋণও শেষ করছি না।”

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 12:47 PM
Updated : 13 March 2024, 12:47 PM

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওই জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন। তার বাড়ি নেত্রকোণার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোণা ইউনিয়নের বাঘরোয়া গ্রামের।

দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী ও মা লুৎফুন্নাহার বেগমের পাঁচ সন্তানের চতুর্থ রোকন। সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছেন তারা।

এ ঘটনায় শঙ্কা, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। তারা তাদের এলাকার ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

রোকনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা লুৎফুন্নাহার বেগম আহাজারি করছেন। কিছু সময় পর পর মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবা মিরাজ আলী অসুস্থ। তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। কথা হয় রোকনের বোন শাহীমিনা আক্তারের সঙ্গে।

তিনি জানান, মঙ্গলবার খবর পাওয়ার পর থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। কারও মুখ দিয়ে খাবার নামছে না।

বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা। তখনও রোকনের মা লুৎফুন্নাহার বেগম বিলাপ করে চলেছেন।

বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, “কত আদরের ছেলে আমার। ঋণ করে ছেলেডারে পড়াইছি। অহনো ঋণও শেষ করছি না। আমার ছেড়াডা দুইদিন আগে ফোন কইর‌্যা কইতাছে আম্মা রোজা রাইখ্যো। আমি রাখছি। আমরা এইহানে কিছুক্ষণ পরেই ইফতার করব।”

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমার রোকনরে আমার কোলে ফিরাইয়া দেইন। আরো যারা আছে তাদেরও ফিরাইয়া আনেন। আমার মতোই তারা মায়েরাও কানতাছে।”

গত বছর মার্চের ২০ তারিখে রোকন উদ্দিন ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। তানিয়া বাবার বাড়ি থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি সন্তানসম্ভবা। আগামী ৯ এপ্রিল চিকিৎসক তার সিজারের তারিখ দিয়েছেন বলে জানায় পরিবার।

বোন শাহীমিনা আক্তার বলেন, “আমার ভাই সর্বশেষ তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। তখন জলদস্যুরা ঘিরে ধরেছে। তখন ভাই বলতেছিল, ফোনটা নিয়া যাইবগা আর কথা কওন যাইব না। এইডাই শেষ কথা। আমরা উদ্বেগ, আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমরা ভাইকে ভালভাবে ফিরত পেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”

রোকনের বড়ভাই দিনমজুর সাইদুল ইসলাম বলেন, “কালকার আগের দিন রাইতে কথা অইছে। ভালাই আছে কইছে। আর কথা অয় নাই। ভাইয়ের কোনো খোঁজখবর পাইতাছি না। এইবায় আমরা তো ভালা নাই। কাইল রাইত থেইক্যা বাড়ির কেউরই খাওয়া নাই। পেডে দিয়া কি আর খাওয়া নামে।”

ঠাকুরাকোণা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য একলাছ মিয়া বলেন, “ছেলেটা খুব ভালা। আমরা এলাকার সব মানুষের মন খারাপ। খবরডা পাওয়ার থেকে এলাকার সবাই রোকনদের বাড়িতে। রোকনকে আমরার মাঝে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরার আকুল আবেদন, আমরার ছেলেরে যেন ভালামতোই ফিরাইয়া আনেন।”

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জলদস্যুরা। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি দস্যুদের কবলে পড়ে।

আরও পড়ুন:

এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

ছিনিয়ে নেওয়া ইরানি ট্রলারে করে এসে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি

জাহান মণি থেকে আবদুল্লাহ: ২৩ নাবিকের মুক্তি মিলবে কীভাবে

জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা

জলদস্যুর কবলে জাহাজ: এমভি আবদুল্লাহে জিম্মি যারা

জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি

Also Read: মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে আকুল ছিলেন ডেক ক্যাডেট সাব্বির