সন্তান জীবিত আছে এমন খবরের আশায় আছে পরিবার।
Published : 17 Jan 2023, 09:32 PM
বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে ‘বম পার্টি’র আস্তান গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য আল-আমিনের খুনের খবর আসার পর তার সঙ্গে ঘরছাড়া কুমিল্লার আরও দুই তরুণের পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার বিকালে ওই দুই তরুণের পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সন্তানদের আল-আমিনের মতো ‘পরিণতি’র কথা তারা ভাবতেও পারছেন না; জীবিত আছেন এমন খবরের আশায় আছেন তারা।
কুমিল্লা থেকে অগাস্টের শেষ সপ্তাহে ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ একসঙ্গে ঘর ছাড়ে সাত তরুণ। পরে বিভিন্ন সময় তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে একজন।
‘নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে’ চলতি সপ্তাহে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের নুরুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম ওরফে আল-আমিনের খুনের খবর পায় পরিবার। যদিও তার লাশ পায়নি এখনও পরিবার। মঙ্গলবার ছেলেকে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেছেন নুরুল ইসলাম।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আস সামির পরিবারে আতঙ্ক ভর করে। তারা সন্তানদের খবর পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন।
কুমিল্লা নগরীর রানীরবাজারের পাশের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে নিহাল আব্দুল্লাহ এবং কুমিল্লা নগরীর রানীরদিঘীর পাড়ের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আস সামি চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বাড়ি ছাড়ায় তারা পরীক্ষায় বসতে পারেননি বলে জানায় পরিবার।
নিখোঁজের পর দুই পরিবারই নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আস সামির পরিবার জিডি করে ২৭ অগাস্ট।
ছেলে নিহাল আব্দুল্লাহর বেঁচে থাকা নিয়ে অনেকটাই শঙ্কিত বলে জানান সাইফুল ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আল-আমিনের শেষ পরিণতির খবর জেনে অনেকটা দিশেহারা অবস্থায় আছি। আমার ছেলের ভাগ্যে শেষ পরিণতি কী হয়েছে বলতে পারব না।
“আমার ছেলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। তার জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। এরপরও ছেলে বেঁচে আছে এমন খবর শুনতে চাই। সেই অপেক্ষাই করছি।”
আস সামির বাবা মাহাবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলেটাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখে-শুনে বড় করেছি। আমার ছেলেটা এমন ছিল না। তাকে যারা এই পথে নিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”
“আমার ছেলে জীবিত ফিরবে, সেই অপেক্ষায় পরিবারের সবাই প্রহর গুনছি। আমার ছেলে জঙ্গিবাদে জড়াল; এ কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কুমিল্লা থেকে সাত তরুণের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানান। এ সময় তিনি তাদের দুজনের গ্রেপ্তারের তথ্য দেন। তারা এখন কারাগারে আছেন।
এই দুজন হলেন কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮) এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ ওরফে রিফাত (১৯)।
র্যাব কুমিল্লার মজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান বিন রহমান শিথিলকে (১৮) গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। যে এখন বান্দরবানে পুলিশের রিমান্ডে আছে। তার কাছ থেকেই আল-আমিনের খুন হওয়ার তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আর পটুয়াখালী থেকে জঙ্গি দল থেকে কৌশলে ফিরে আসা অপর তরুণ হলেন সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫)। তিনি রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা এবং রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
নিলয় নিখোঁজ নেহাল আব্দুল্লাহর খালাত ভাই। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় এসে তিনি অন্য ছয় তরুণের সঙ্গে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার বিকালে ‘জঙ্গি’ আল-আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম বান্দরবানের আদালতে যে হত্যা মামলা করেছেন সেখানে ছেলেকে ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই’ করে উগ্রবাদীরা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করার এবং দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণে নিয়ে ‘মতের মিল না হওয়ায়’ খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে সেই মামলায় ২০ আসামির মধ্যে নিহাল আব্দুল্লাহ এবং আস সামির নাম নেই।
আরও পড়ুন: