“হাটের কারণে শিশুদের মনোযোগ তো থাকেই না, উল্টো অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
Published : 25 Apr 2025, 10:25 AM
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হয়েছে হাট-বাজার। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ। খেলাধুলার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যাতায়াতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
গত ১৬ এপ্রিল থেকে তিন একরের ওই মাঠে হাট বসানো হচ্ছে। প্রতি শনি ও বুধবার হাটের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল থেকে। সারা দিন চলে বেচাকেনা। আর বাকি দিন প্রতিষ্ঠানটির মাঠে দৈনিক বাজার বসে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, যদি এই মাঠ হাটের দখলে চলে যায়, তাহলে কোমলমতি শিশুদের আর কোনো স্বপ্ন থাকবে না।
শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া বলছিল, “আমার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন, কিন্তু এখন মাঠে খেলতে পারি না। আমরা পড়তে এসেছি, পশুর হাট দেখতে না।”
দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল বলছে, “পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা না করতে পারলে আমরাও পিছিয়ে যাব।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শিয়ালখোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাশেম আলীর কণ্ঠে ফুটে ওঠে অসহায়েত্বের ছাপ।
তিনি বলেন, “শিক্ষার পরিবেশ বাঁচাতে হলে মাঠ হাটমুক্ত করতে হবে। কিন্তু আমরা বারবার বলেও সাড়া পাচ্ছি না।”
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয়রা বলেন, উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া এলাকায় অবস্থিত শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিয়ালখোওয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। একই ক্যাম্পাসে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ২২৩ জন শিক্ষার্থী এবং উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একমাত্র খেলার মাঠটির আয়তন প্রায় তিন একর। এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও একটি মাদ্রাসা। এ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই মাঠটিতে খেলাধুলা করত।
এই মাঠের পাশেই ৫৮ শতক জমির ওপর সরকারিভাবে শেড দেওয়া ঘরে শিয়ালখোওয়া হাটের অবস্থান। সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার বসা হাটটি দীর্ঘ দিন ধরেই নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে দখল করে ফেলত স্কুল মাঠ।
মাঠ জুড়ে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, সাইকেল, তামাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার বসায় সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতেও খেলার উপযোগী থাকত না। মারাত্মকভাবে ব্যহত হত শিক্ষার পরিবেশ।
সেজন্যই শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দিতে আন্দোলনে নামেন অভিভাবকরা। তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছর থেকে মাঠে হাট বসানো বন্ধ হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা ফিরে পেয়েছিল পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ, খেলাধুলার জায়গা ও নিরাপত্তা। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হল না।
যেখানে খেলাধুলা, শরীরচর্চা আর মুক্ত বাতাসে বেড়ে ওঠার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের; সেখানে এখন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, সাইকেল, পেঁয়াজ, তামাকসহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিন্দ্র নাথ রায় বলেন, “অতিরিক্ত লোকসমাগমে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। মাঠে পশু রাখা হচ্ছে, বাজে শব্দ আর দুর্গন্ধে সমস্যা বাড়ছে।”
এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, “হাটের কারণে শিশুদের মনোযোগ তো থাকেই না, উল্টো অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পশু জবাইয়ের দৃশ্য, বর্জ্য, হট্টগোল এসব শিশুমনের জন্য ভয়ানক।”
এ বিষয়ে জানতে চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “হাট ইজারা দেওয়া হলেও স্কুলমাঠ ইজারা দেওয়া হয়নি। বিকল্প জায়গা খোঁজার চেষ্টা চলছে। দ্রুত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুজিবর রহমান বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
এ বিষয়ে জানতে হাট ইজারাদার আসাদুল হক হিরুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।