‘বম পার্টি’র আস্তানায় প্রশিক্ষণে যাওয়া আরও ৫ জঙ্গি পাহাড়ে গ্রেপ্তার

তবে র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2023, 11:05 AM
Updated : 12 Jan 2023, 11:05 AM

বান্দরবানের পাহাড়ের গহীনে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ’ বা ‘বম পার্টি’র আস্তানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যাওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। 

রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গভীর অরণ্যে অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এলিট বাহিনী র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার চার জঙ্গি হলেন- নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার মুকিল্লা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ (৩০), সিলেটের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০) এবং কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু (২১)। এবং বাকি একজন কুমিল্লার কিশোর (১৭)।

বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সালেহ আহমেদ, সাদিকুর রহমান ও কুমিল্লার এক কিশোরকে থানচি এবং বায়েজিদ ও নিজামুদ্দিন হিরণকে রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার কিশোর (১৭) কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আটজনের মধ্যে একজন। সাদিকুর সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া চার তরুণের মধ্যে একজন। গ্রেপ্তার সবার নাম ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ নিখোঁজ হওয়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে অক্টোবরে সংবাদ সম্মেলন করে জানান র‌্যাব।

অক্টোবর মাস থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় যৌথ অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও সেনা সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১২ জন সদস্য এবং কেএনএফের পাহাড়ে যারা ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত তাদের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার সদস্যদের বরাতে র‌্যাব ২১ অক্টোবর জানিয়েছিল, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ’র ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার।

বুধবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সেখানে প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কাঠামো সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, সংগঠনটির ছয়জন শুরা সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে আব্দুলাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় প্রধান, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান।

এ ছাড়া সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা শামিন মাহফুজ প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক করতেন এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন।

অপরদিকে ভাংচুংলিয়াম বম, লালজং মুই ও লালমুনঠিয়ালের তত্ত্বাবধানে কেএনএফ গহীন পাহাড়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লিখিত বক্তব্যের গ্রেপ্তার পাঁচজনের পরিচয় ও জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিবরণও তুলে ধরেন।

নিজামুদ্দিন হিরণ ওরফে ইউসুফ: নোয়াখালীর এই যুবক ২০১৯ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে এসে ব্যবসার সুবাদে জহির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি ‘হিজরতের’ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যান।

সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা: কুমিল্লার একটি নূরানী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। পাহাড়ে অবস্থানরত অপর এক জঙ্গি নেতা মো. দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইয়ের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হন। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনিসহ আরও সাতজন সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য কেএনএফ ক্যাম্পে যান।

সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন: সিলেটের একটি জিমনেসিয়ামে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য রনবীরের মাধ্যমে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন। সিলেট থেকে যে চারজন তরুণ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে জঙ্গিবাদের জড়ান, তিনি তার মধ্যে একজন।

ফারকুন জঙ্গি সংগঠনের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী। তিনি ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বান্দরবানে আসেন। সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন।

বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু: সংগঠনটির আমির আনিছ মাহমুদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ২০২১ সালের নভেম্বরে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি বান্দরবানে আসেন।

১৭ বছর বয়সী কিশোর: কুমিল্লা থেকে ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ যে আটজন নিখোঁজ হয় তার মধ্যে সে একজন। কুমিল্লা থেকে বেরিয়ে সে নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ নাফিজ নামে একজনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সে বান্দরবানে আসে। তারপর থেকে সেখানেই ছিল।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আটজনের মধ্যে চারজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং একজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাকি তিনজনকে খুঁজে বের করতে অভিযান চলমান রয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

পুরনো খবর:

Also Read: বম পার্টির সঙ্গে নতুন জঙ্গি দলের ‘মাসিক চুক্তির’ খবর দিল র‌্যাব

Also Read: ৭ জঙ্গির সঙ্গে এবার ৩ পাহাড়িও গ্রেপ্তার: র‌্যাব

Also Read: জঙ্গিদের সঙ্গে বম পার্টির যোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: নতুন জঙ্গি দল: পাহাড়ে অভিযান, তথ্য দিলে লাখ টাকা পুরস্কার

Also Read: নতুন জঙ্গি দলের ‘পাহাড়ি যোগ’ পেয়েছে র‌্যাব

Also Read: জঙ্গি আর পাহাড়ি দলের মিলে যাওয়ার বিপদ যেখানে

Also Read: র‌্যাবের জালে নতুন জঙ্গি দল, কারা এরা?

Also Read: নিখোঁজ ‘৫৫ জন’ নতুন জঙ্গি দলে, ৩৮ জনের তালিকা দিল র‌্যাব

Also Read: জঙ্গি নেতারা সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন: ফিরে আসা নিলয়

Also Read: নিখোঁজ ৪ তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানাল নতুন জঙ্গি দলের নাম