কথিত হিজরতে গিয়েই ভুল পথে পা ফেলার বিষয়টি বুঝতে পারার দাবি তার।
Published : 07 Oct 2022, 12:44 AM
যার তথ্যের ভিত্তিতে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, সেই শারতাজ ইসলাম নিলয় এখন বলছেন- তার মত আর কেউ যেন ভুল পথে পা না বাড়ায়।
ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করা নিলয় কুমিল্লার সাত শিক্ষার্থীর সঙ্গে গত অগাস্টের শেষে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কথিত হিজরতে গিয়ে ভুল পথে পা ফেলার বিষয়টি বুঝতে পেরে সপ্তাহ শেষেই ঢাকায় বাসায় ফেরার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তার দেওয়া তথ্যের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে কুমিল্লায় নিখোঁজ দুইজনসহ সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটের দাবি, জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও হুজির সাবেক কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করে। যেটির সঙ্গে ‘ভুল করে’ জড়িয়েছিলেন নিলয়।
কুমিল্লা থেকে নিখোঁজের আট দিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর নিলয় ঢাকার বাসায় ফেরার পর র্যাব তাকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নজরদারিতে রেখে নিখোঁজ বাকিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ড্যাফোডিলের এই স্নাতক নিখোঁজ হওয়া তরুণদের ও জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার নয়, নিলয় তার পরিবারের কাছেই থাকবে।”
নিলয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- পটুয়াখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ (৩৩), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), পটুয়াখালীর কম্পিউটার ব্যবসায়ী বণি আমিন (২৭), কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯) ও হাসিবুল ইসলাম (২০); তাদের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া গোপালগঞ্জের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রোমান শিকদার এবং ঢাকার একটি ছাপাখানার কর্মী মো. সাবিত (১৯)।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নিলয়কে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের মাঝে আনা হলে তিনি তার খালাত ভাই নিহাল আবদুল্লাহর মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হন বলে দাবি করেন।
কথিত হিজরত সম্পর্কে জানতে চাইলে নিলয় বলেন, “(নেতাদের পক্ষে) সশস্ত্র প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছিল।”
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীকালে জঙ্গি কার্যক্রমে তার এই ‘জার্নি’ শুরু উল্লেখ করে নিলয় দাবি করেন, তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খালাত ভাই নিহাল (কুমিল্লা থেকে নিখোঁজদের একজন) ১০ দিনের জন্য বেড়াতে আসে। আর তখনই তাকে জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করে।
নিলয়ের ভাষ্য, “নিহাল তখন বলেছিল, ‘তুমি (নিলয়) যে চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আছ, এগুলো ভুল। জিহাদের রাস্তাই সঠিক’।”
তবে তখন এসব কথাবার্তায় তেমন পাত্তা দেননি দাবি করে ঢাকার এ তরুণ বলেন, পরে তার খালাত ভাই ফিরে গিয়ে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ‘আর্টিকেল’ ও ‘ভিডিও’ পাঠায়।
“কিন্তু এগুলো নিয়েও আর মাথা ঘামাইনি।”
তবে ২০২০ সালে নিহালদের কুমিল্লার বাসায় বেড়াতে গেলে তাদের মধ্যে আবার এগুলো নিয়ে কথা হয়। তখন ফ্রান্সে মহানবীকে কটূক্তি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছিল।
ওই বিক্ষোভের সময় থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িত হতে শুরু করেন জানিয়ে নিলয় বলেন, “কুমিল্লার বন্ধু-বান্ধবদের একটি সংগঠন ছিল, ওই সংগঠন একটা আন্দোলনের আয়োজন করে ওইটার মাধ্যমেই মূলত আমি এর সাথে জড়িয়ে পড়তে শুরু করি।”
এরপর বিভিন্ন সময় নিহাল তাকে জসিম উদ্দিন রহমানির ওয়াজ শোনাত উল্লেখ করে নিলয় বলেন, “এই ওয়াজ বা ভিডিও দেখে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানার ইচ্ছা হলে খালাত ভাই নিহালই এর উত্তর দিত।
“এরপরে আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়লে একজন নেতার প্রয়োজন পড়ে।”
তখন ফাহিম নামের একজনকে খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ফাহিম ভাইকে খুঁজে পাওয়ার পর ২০২১ সালের জুলাইয়ের দিকে একটি মসজিদে এক ঘণ্টার জন্য একটা মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। ওখানে আমাদেরকে বিভিন্ন নিরাপত্তার বিষয় ছাড়াও নিজের পরিচয় কীভাবে গোপন করা যায়, এসব নিয়ে আলোচনা হয়।”
এ চক্র থেকে ‘বের হলেন’ কিভাবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যখন পরিবার ছেড়ে হিজরতের কথা বলা হত, তখনই বিষয়টি নিয়ে মনে খটকা লাগে। পরিবার ছেড়ে থাকার বিষয়টি মেনে নিতে না পারায় সেখান থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই এবং ভুল রাস্তায় আছি বলে মনে করি।
“এক সময় পটুয়াখালী থেকে সুযোগ পাই, তখন আমি বের হয়ে যাই।”
গত ২৩ অগাস্ট ঘর ছাড়ার পর এক পর্যায়ে ভুল করে নিলয়সহ কয়েকজন চাঁদপুরে যান উল্লেখ করে র্যাব জানিয়েছে, পরে কুমিল্লায় ফিরে জঙ্গি সংগঠনটির এক সংগঠক তাদের চারজনকে ঢাকায় আনে। রাজধানীতে এক ব্যক্তির জিম্মায় তিনজনকে রেখে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে দেন ওই সংগঠক।
এরপর পটুয়াখালীতে কয়েকদিন অবস্থানের পর পালিয়ে ঢাকায় বাসায় আসেন নিলয়। এরপর র্যাবের নজরদারিতে ছিলেন তিনি।
আর যাতে কেউ এমন ভুল না করে, সেই আহ্বান জানিয়ে নিলয়ের পরামর্শ, “যা করার, বুঝে শুনে করা উচিত। না বুঝে- পা না ফেলাই উচিত। এই ভুল রাস্তায় আর যেন কেউ না জড়ায়।”
আরও পড়ুন:
র্যাবের জালে নতুন জঙ্গি দল, কারা এরা?
নিখোঁজ ৪ তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানাল নতুন জঙ্গি দলের নাম
র্যাব জঙ্গিদের চেয়েও ‘স্মার্ট’: খুরশীদ
‘জঙ্গি সম্পৃক্ততায় বাড়িছাড়া’ চার ছাত্রসহ গ্রেপ্তার ৭