৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা সরে গেলে সেই স্থানে বিএনপির নেতারা আবির্ভূত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
Published : 23 Feb 2025, 01:30 AM
দেশে সরকার পাল্টে সংস্কারের তোড়জোড় চললেও স্বচ্ছ জলের সীমান্ত নদী সুনামগঞ্জের যাদুকাটার পাড়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের মহোৎসবে ভাটা পড়েনি।
স্থানীয়রা বলছেন, বালু ও পাথর তোলার ক্ষেত্রে দেড় দশক ধরে নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা আর নেই। বিএনপির নেতারা এখন সেই জায়গা নিয়েছেন।
নতুন ‘ব্যবস্থাপনা’ আসার পর ‘বালু ও পাথর খেকোরা’ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। আগের তুলনায় বেশি ‘সেইভ মেশিন’ বসছে নদীতে। যার ফলে আধা কিলোমিটারের নদী এখন তিন কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
আর স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করেই ইজারাদার এসব কাজ চালাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করলে জোটে হুমকি, নির্যাতন আর মামলা।
বালু ও পাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন নদীর তীরে সেইভ মেশিন চালিয়ে বালু-পাথর তোলার জন্য প্রতিফুটে পাঁচ থেকে ছয় টাকা দিতে হয়। আর নদীর পাড় থেকে একটু দূরে নদীতে সেইভ মেশিন চালিয়ে বালু তোলার জন্য প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা দিতে হয়। এই টাকার ভাগ যায় সবখানে। ব্যবসায়ীদের প্রতিফুট বালু-পাথরে গড়ে ১১ টাকা করে র্যয়ালটি দিতে হয় ইজারাদারকে।
নদী পাড়ের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা মো. সাহাজুল আহমেদ ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন, “৫ অগাস্টের পর থেকে বেশি করে পাড় কাটা চলছে। আগের থেকে তিনগুন বেশি হারে কাটা হচ্ছে। বর্তমানে বিএনপির নেতারা জড়িত পাড় কাটা ও চাঁদাবাজিতে। আমাদের গ্রামের অনেকের বাড়ির কাছে চলে আসছে পাড় কাটতে-কাটতে।
“আগে নদীর এ পাড় থেকে ওই পাড়ের মানুষ চেনা যেত; আর এখন নদী হয়ে গেছে হাওর।”
এ কাজে বিএনপি নেতাদের মধ্যে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুনাব আলীর নাম এসেছে গ্রামবাসীর কথায়।
জুনাব আলী নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করলেও নদীর পাড় যে কাটা হচ্ছে সেটা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। এটা মূলত ইজারাদাররা করাচ্ছে; এখন মানুষের বাড়িঘর কাটা হচ্ছে। আমার নাম কেন বলবে? আমরা তো পাড় কাটার বিরুদ্ধে। পাড় কাটলে ইজারাদারদের লাভ আর যারা সেইভ মেশিন চালায় তাদের লাভ। ইজারাদাররা বেশি রয়্যালটি পায়।”
বালতি-বেলচার বদলে ‘সেইভ’ মেশিন
‘যাদুকাটা-১’ এবং ‘যাদুকাটা-২’ বালুমহাল হিসেবে প্রায় ৫০০ একর জায়গা জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে নদীর লাউড়েরগড় থেকে শুরু মিয়ারচর ঘাট পর্যন্ত অন্তত চার কিলোমিটার এলাকায় চলছে বালু-পাথর তোলার কার্যক্রম।
সনাতন পদ্ধতিতে হাত, বালতি, বেলচা দিয়ে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও সেখানে অবাধেই ব্যবহার হচ্ছে কয়েক হাজার সেইভ মেশিন; যা সেখানকার জীব-বৈচিত্র্য ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও গতিকে বাধাগ্রস্ত করে গোটা এলাকার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ১৪২৮ বাংলা সালে যাদুকাটা নদীর দুটি বালুমহাল ১২ কোটি টাকায় এবং ১৪২৯ সালে ৩২ কোটি টাকায় ইজারা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ১৪৩০ বাংলা সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকায়; ভ্যাট ও আয়করসহ যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৬৫ টাকা।
কিন্তু ১৪৩১ বাংলা সালে ‘যাদুকাটা-১’ বালুমহালের জন্য ১২ কোটি ৯০ লাখ এবং ‘যাদুকাটা-২’ এর জন্য ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হন সোহাগ এন্টারপ্রাইজের রতন মিয়া ও রিহান এন্টারপ্রাইজের মজিবুর রহমান।
অর্থাৎ দুটি মহাল মোট ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ইজরাদাররা। ভ্যাট ও আয়করসহ যার মূল্য দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এই দর ধরে মহালগুলো ইজারা দিয়ে প্রায় ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
বালুমহাল হিসেবে ইজারা নিয়ে বালুর পাশাপাশি সিঙ্গেল, নুড়ি ও ভুতু পাথর উত্তোলন করার প্রতিবাদ করছেন স্থানীয়রা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইজারাদারের রয়্যালটিরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে বালুর প্রতিফুটে ইজারাদারকে দিতে হত ১৫ টাকা। ৫ অগাস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের হস্তক্ষেপে সেটি নয় টাকা করা হয়েছিল। এর কিছু দিন পর ইজারাদার সেটিকে প্রতিফুটে ১১ টাকা করে নির্ধারণ করেছেন।
নিরুপায় হয়ে জায়গা বিক্রি
সম্প্রতি এক দুপুরে ঘাগটিয়া-আদর্শ গ্রামের পুকুরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সামনে থাকা দেড় কিলোমিটার নদীর পাড় কাটা হচ্ছে শত শত ছোট-বড় নৌকা দিয়ে। পাড় কেটে বালু ও পাথর তুলতে তুলতে অনেকের বাড়ির কাছে চলে এসেছে নদী।
আদর্শ গ্রামের সামনে থাকা অংশ কেটে আলাদা করা করা হয়েছে। নদীর পাড়ে হাজারখানেক বারকি নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়ে পরিবেশবিনাশী ‘সেইভ মেশিন’ চলছে। বালুর স্তূপ করে তা বারকি নৌকায় তোলা হচ্ছে। একইভাবে সেইভ মেশিন ব্যবহার করে পাথরও তোলা হচ্ছে। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চারপাশে নজর রাখছে ইজারাদারদের লোকজন। দেখে মনে হবে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।
গ্রামবাসী বলছে, লাউড়েরগর, ঘাগটিয়া, বড়টেক, আদর্শগ্রাম, গড়কাটি, ঘাগড়া, রাজারগাঁও, সোহালা, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, মোদেরগাঁও, মাহারাম, মানিগাঁও, বিন্নাকুলি, মিয়ারচর, পিরিজিপুর, দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, নোয়াহাট, পাতারী, তিওরজালাল, বালিজুরী, মাহমুদপুর, বারুঙ্কাসহ আশপাশের এলাকা এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
এরই মধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লাউড়েরগড়ের একটি বিশাল গোচারণ ভূমি, কবরস্থান, নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম ঘাটের কিছু অংশ, আনোয়ারপুর বাজার, বিন্নাকুলি বাজার ও ফাজিলপুর।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে উত্তর বড়দল, বাদাঘাট ও বালিজুরি ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
ইজারার সীমানার বাইরে এসে পাড় কাটা চলছে জানিয়ে আদর্শ গ্রামের মো. সাহাজুল আহমেদ বলছিলেন, “পাড় কাটতে-কাটতে আধা কিলোমিটারের নদী এখন তিন কিলোমিটার হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিছে। পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও বিএনপির বড় নেতারা মিলে নদীটি শেষ করে দিচ্ছে। ২০ থেকে ৩০টি গ্রামসহ বড়-বড় হাওরগুলো হুমকিতে পড়ছে। দ্রুত পাড় কাটা বন্ধ না হলে এলাকার সবকিছু ধ্বংস হবে।”
পাড় কাটার প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার হয়েছেন ঘাগটিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীন। মামলা করেও কোনো ফল পাননি।
তিনি বলছিলেন, “কয়েকদিন বন্ধ ছিল। তিন মাসে নদীটা শেষ করে দিছে। লুটপাট করে কোটি-কোটি টাকা কামাই করেছে; আগে তো খেতে পারত না। নদী পাড়ে আমার বাগান ছিল; বাগানের কাছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু-পাথর তোলার সময় নিষেধ করলে আমাকে মারধর করে।
“বিএনপি নেতা কালাম আর তার বাতিজা রানু মেম্বার এটা করছে। কালাম গ্রামবাসীর সঙ্গে তিনবার মিটিং করে পাড় কাটা বন্ধের কথা বলেছে। আর তার বাতিজা রানু মেম্বার ও ছেলে তালহা মিলে পাড় কাটছে, এই হচ্ছে অবস্থা আমাদের।”
জয়নাল আবেদীন বলেন, “দেখেন কিছু করা যায়নি, অনেক মানুষকে নির্যাতন করছে এরা। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না ভয়ে। আমি মরণ ডরাই না। আমার নদীর পাড়ে থাকা কোটি-কোটি টাকার সম্পদ নিয়েছে তারা।”
একই কথা বলছিলেন বাদাঘাটের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, “যে হারে পাড় কাটা চলছে; তা দেখে যাদের নদীর পাড়ে জমি আছে তারা জায়গা বিক্রি করছেন। তা না হলে জমি নদীতে যাবে। দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেকে আবার ভালো দাম দেখে পাড় কাটা চক্রের কাছে জমি বিক্রি করছেন।
“আর বালু তুলতে গিয়ে কারো জায়গা কেটে নিলে তা নিয়ে ঝামেলা হলে ওসির কাছে সমাধান হয় বিষয়টি। সবাই পাড় কাটায় জড়িত কোনো না কোনোভাবে। কেউ কিছু বললে সবাই এক হয়ে লাগবে। সবকিছু প্রশাসনের কাছে রয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের লোকজন প্রশাসনের সহায়তায় এই কাজ করেছে।”
তাহিরপুর উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি ও নদী তীরবর্তী বালিজুরী গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস আলম তো সরাসরি এসব কাজে ইউএনও, ওসি ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকার পাথরই তোলা হচ্ছে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ইজারা কার্যক্রম হাই কোর্টে রিট আবেদন করে বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও ইাজারা দিতে ফের শিডিউল বিক্রি করা হচ্ছে।”
নদীটি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, “যাদুকাটা নদীতে যা হচ্ছে সেটার দায়ভার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। একই সঙ্গে প্রশাসন আদালতের রায়ের অবমাননা করছে। প্রশাসন আন্তরিক না হলে এসব বন্ধ হবে না। আর এভাবে চলতে থাকলে নদী-পরিবেশ-প্রকৃতি শেষ হয়ে যাবে।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইজারাদার সোহাগ এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন মিয়া এবং রিহান এন্টারপ্রাইজের মালিক মজিবুর রহমানকে ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
গ্রামবাসীর অভিযোগ, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশাহিদ হোসেন রানু ওরফে রানু মেম্বারের নেতৃত্বে ঘাগটিয়া-আদর্শ গ্রামের সামনে চলছে পাড় কাটার কার্যক্রম। নদীর পাড় কাটার অভিযোগে ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে রানুসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একাধিক মামলার আসামিও রানু মেম্বার।
তার সঙ্গে আছে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির মানবধিকার বিষয়ক সম্পাদক রাখব উদ্দিন, উত্তর বড়দল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন।
গড়কাটি গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, কোয়ারি খুড়ে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিক মিয়া, তার ভাই মাসুক মিয়া, বুরহান উদ্দিন, কিরণ, হাসান, আশরাফসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
তবে সবাই বালু লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
ইউপি সদস্য মোশাহিদ হোসেন রানু বলেন, “মানুষ আমার নাম বললেও আমি জড়িত না।”
এ কারণে তো জেলে ছিলেন, সেটা মনে করিয়ে দিলে রানু মেম্বার বলেন, “আমি পাড় কাটা বাদ দিছি। এই বছর আমি নদীতেই যাইনি।”
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন।
“আগে আফতাব উদ্দিন পাড় কাটছে, এখন তার বড় ভাই রাখাব উদ্দিন পাড় কাটছে। বাগানের সামনে আমার জায়গা রয়েছে। সেটা রক্ষা করতে লোক রেখেছি। আমি পাড় কাটায় জড়িত না। আমার মানুষ নদীর পাড়ে থাকে বিধায়, আমার নাম বলতেই পারে।”
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমি কীভাবে জড়িত? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। নদীর পাড়ই তো এখন নাই। আমি ইতা কিছু জানি না।”
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক রাখব উদ্দিন বলেন, “আমার নাম মিথ্যা ধারণা থেকে বলে। নদীর মধ্যে রতন ও মজিবুর জড়িত, তারা হল মালিক। আর নদীর তো এখন আর পাড় নেই। নদী শুকিয়ে পানি তলাতে। পাড় কাটার জন্য রানুকে তো একবার পুলিশ ধরছে। আমার নিজের নৌকা রয়েছে, ব্যবসা করি বালু-পাথরের।”
বিএনপি নেতাদের নামে চাঁদা উঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাখব বলেন, “এটা ভুয়া।”
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিক মিয়ার মোবাইলে ফোন করা হলে ধরেন তার স্ত্রী। পরে অন্য নম্বরে ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।
বিএনপি নেতাদের নামে চাঁদা ওঠানো কিংবা পাড় কাটায় জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুল হক বলেন, “আপনারা যা সত্য পান, তা লেখেন। বিএনপির নাম নিয়ে ধান্দা করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিএনপি সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, “আমার জানা মতে, এই ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ কেউ উপস্থাপন করেন তহালে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে।”
প্রশাসন যা বলছে
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “নদীতে অবৈধ কার্যক্রমের যখন অভিযোগ পাওয়া যায় তখনই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচলানা করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ড্রেজার মেশিন ও সেইভ মেশিন জব্দ করে জেল ও জারিমানা হয়েছে। অভিযান চলবে।
“প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলার কোনো সুযোগ নেই।”
হাই কোর্ট নদীটির ইজারা বন্ধে নির্দেশ দেওয়ার পরও শিডিউল বিক্রির বিষয়ে ডিসি বলেন, “আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব। হাই কোর্টের কাগজপত্র অফিসিয়ালি এখনও পাইনি।”
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তাপস রঞ্জন ঘোষ মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন। পরে আবার কল করলে তিনি ধরেননি।
উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদা তোলার বিষয়ে তাহিরপুরের ইউএনও আবুল হাসেম বলেন, “আমরা এসবে জড়িত না। আমার কোনো স্টাফ নদীতে যায় না। কয়েক দিন আগেও তিনজনকে জেলে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর।”
তাহিরপুর থানার ওসি দোলোয়ার হোসেন বলেন, “এখন নদীতে কোনো পাড় নেই; বর্তমানে নদী হচ্ছে সাগরের মত। নদীতে কোনো পানি নেই। নদীতে পাড় কাটা হচ্ছে না।”
পুরনো খবর-
যাদুকাটায় পাড় কাটা বন্ধ হলেও ড্রেজারের তাণ্ডব চলছে
কাটা হচ্ছে যাদুকাটার পাড়, গ্রামগুলো হুমকিতে
যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার সময় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
যাদুকাটা নদী রক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
ড্রেজার-ট্রলারের ধাক্কায় যাদুকাটায় নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ক্ষতিগ্র