আবাসিক হোটেল থেকে হাত বাঁধা সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
Published : 21 Aug 2023, 07:26 PM
কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেলের কক্ষে হত্যাকাণ্ডের শিকার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে মুখে মাস্ক ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে দেখা গেছে।
হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া এমন দৃশ্যের সূত্র ধরে ওই যুবককে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ ঘটনায় পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিসিটিভির ফুটেজে পাওয়া তথ্যের বরাতে এএসপি মিজানুর বলেন, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে প্রবেশ করেন সাইফুদ্দিন। পরে ওই যুবক রাত ৮টা ১০ মিনিটে হোটেল থেকে চলে যান।
সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়া ওই যুবককে শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে হাত বাঁধা সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত সাইফুদ্দিন (৪৫) কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, নিহতের শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাত ও জখম পাওয়া গেছে। নিহতের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে হাত বাঁধা ছিল। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজসহ নানা উৎস থেকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে।
হোটেল সানমুনের ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, “রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনসহ দুজন ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন। সোমবার সকালে তার সন্ধানে আসেন বন্ধুরা। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কক্ষের দরজায় ধাক্কা দিলে খুলে যায়। খাটে রক্তাক্ত সাইফুদ্দিনের মরদেহ দেখে থানায় খবর দেওয়া হয়।”
সাইফুদ্দিন মাঝেমধ্যে ওই হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন বলেও জানান হোটেল ম্যানেজার রেজাউল।
পুলিশ জানায়, ওই হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ এবং পাশের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সাইফুদ্দিন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে হোটেল সানমুনে যান। এরপর ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে ২০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন।
ওই যুবকের মুখে কালো রংয়ের একটি মাস্ক পরা ছিল এবং হাতে ঘড়ি ও মোবাইল দেখা যায়। সাড়ে ৫টার দিকে কক্ষটিতে প্রবেশ করলেও রাত ৮টা ১০ মিনিটের পর কক্ষটি থেকে বের হন ওই যুবক। হোটেলের দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখা যায় তাকে।
এরপর হাত মুছতে মুছতে আবারও ২০৮ নম্বর কক্ষের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর ওই যুবক কক্ষ থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে হোটেলের সামনে থাকা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান।
ওই যুবকের নাম নয়ন বলে দাবি করছেন নিহতের পরিবার ও বন্ধুরা। রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক কক্সবাজার শহরের কোবা টাওয়ারে থাকেন। বিভিন্ন সময় নয়নকে সাইফুদ্দিনের সঙ্গে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সাইফুদ্দিনের বন্ধু ইলিয়াছ মোহাম্মদ বৈরাম।
তিনি বলেন, “সাইফুল ওই যুবককে তার শ্যালক বলে পরিচয় দিতেন এবং তিনি সাইফুদ্দিনকে দুলাভাই ডাকতেন।”
নিহতের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, “রাতে ভাই বাড়িতে যাননি। ফোনও বন্ধ ছিল। ভাবি (নিহতের বউ) ভাইয়ের বন্ধুদের ফোন করে খোঁজ-খবর নেন। ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াস বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ-খবর নিতে নিতে সানমুনের কক্ষে গিয়ে মরদেহ পান।”
নয়ন নামের যে যুবককে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি কোনোভাবেই সাইফুদ্দিনের শ্যালক নয় বলে দাবি মহিউদ্দিনের।
এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে হোটেলে যাই। সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। সন্দেহজনক কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে শুনেছি।”
এ দিকে সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তার রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
আরও পড়ুন-