অনুপ্রবেশের সময় ৯ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাল বিজিবি

“সীমান্ত দিয়ে একজনকেও অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।”

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2024, 10:08 AM
Updated : 22 Feb 2024, 10:08 AM

মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে দেশটি থেকে নৌকায় ৯ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় তাদের ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটের নাফ নদীর মোহনা থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান।

এদিকে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে লড়াই চললেও বাংলাদেশ সীমান্ত কয়েকদিন ধরে শান্ত রয়েছে। সোমবার থেকে উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের লোকজন শান্তিতে ঘুমিয়েছেন।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকায় করে ৯ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে চেষ্টা চালায়। তবে তারা বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারেনি। পরে মিয়ানমারের ফেরত গেছে।

অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সোমবার দিনভর থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে এলেও সন্ধ্যার পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এমন শব্দ আর শোনা যায়নি। এতে টানা তিনদিন সীমান্তের লোকজন স্বস্তিতে রয়েছেন।”

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সকালে মিয়ানমার থেকে নৌকায় ৯ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিজিবি সতর্ক থাকায় তারা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।

“নাফ নদীর শূন্যরেখা পর্যন্ত এসে এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে একজনকেও অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।

আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধের গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে এপাড়ে। এরকম ঘটনায় অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েকজন। ঢাকায় মিয়ানমারের দূতকে ডেকে এসব ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় বাংলাদেশের তরফ থেকে।

এদিকে যুদ্ধের মধ্যে বিদ্রোহীরা বিজিপির কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করে নিলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরের কয়েক দিনে তাদের সংখ্যা পৌঁছায় ৩৩০ জনে।

পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম দফায় ১৬৫ জনকে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বিকাল ৪টায় বাকি ১৬৫ জনকে একই প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের জাহাজে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন:

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের নৌপথে পাঠানোর প্রস্তুতি

মিয়ানমার থেকে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

রাখাইন থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ

মিয়ানমারে যুদ্ধ: পাল্টে গেল ঘুমধুমের সেই এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র

মিয়ানমারে যুদ্ধ: রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা

১৬৫ বিজিপি গেল মিয়ানমারের জাহাজে, বিকালের মধ্যে বাকিদের হস্তান্তর

মিয়ানমারে যুদ্ধ: পাল্টে গেল ঘুমধুমের সেই এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র

মিয়ানমার যুদ্ধ: অস্ত্রসহ আসা ২২ রোহিঙ্গা তিন দিনের রিমান্ডে

মিয়ানমারে যুদ্ধ: অস্ত্রসহ আসা ক্যাম্পের ২৩ রোহিঙ্গার রিমান্ড আবেদন

২৩ রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ পুলিশে সোপর্দ বিজিবির

অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৩ রোহিঙ্গার রিমান্ড চায় পুলিশ

অনুপ্রবেশকারী ২ রোহিঙ্গাকে ধরে মিয়ানমারে পাঠিয়েছে বিজিবি

২৩ রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ পুলিশে সোপর্দ বিজিবির

Also Read: অস্ত্রসহ আসা রোহিঙ্গারা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে: পুলিশ