মিয়ানমার সরকার তাদের শিপের রুট প্ল্যান জানাবে এবং কোন শিপ আসবে, তারা বিস্তারিত জানাবে। প্রক্রিয়া শুরু মানে এটাই হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওখান থেকে শুরু হয়নি।”
Published : 08 Feb 2024, 06:22 PM
যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নৌপথে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
দুপক্ষের আলোচনার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে কক্সবাজার থেকে গভীর সমুদ্রপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিপির সদস্য এবং তাদের পরিবার মিলিয়ে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে ১০০ জনকে ইতোমধ্যে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সেহেলী সাবরীন বলেন, “মিয়ানমার সরকার তাদের শিপের রুট প্ল্যান জানাবে এবং কোন শিপ আসবে, তারা বিস্তারিত জানাবে। প্রক্রিয়া শুরু মানে এটাই হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওখান থেকে শুরু হয়নি।”
মুখপাত্র বলেন, “শিপটা গভীর সমুদ্র দিয়ে যাবে। নিরাপত্তার একটা ইস্যু ছিল, বর্ডার দিয়ে যাবে বা ওই এরিয়াটায় আমরা পাঠাচ্ছি কি-না, সেটা মনে হয় অতটা সমস্যা হবে না।”
রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে গত রোববার থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর ৩৩০ জন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ কর্মকর্তারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, তারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং মিয়ানমার নিজেদের বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, ভারতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য আকাশপথে তাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলে আসছিল বাংলাদেশ। তবে ধারণক্ষমতা এবং একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের প্রস্তাবে তাদের নৌপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকার যেখানে কাউকে অনুপ্রবেশ না করতে দেওয়ার কথা বলছে, সেখানে মিয়ানমার থেকে আসা সামরিক-বেসামরিকরা ঢোকার সুযোগ কীভাবে পাচ্ছে, সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে। অনুপ্রবেশকারীদের বিমানে ফেরত না পাঠিয়ে নৌপথে পাঠানোর বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়।
জবাবে মুখপাত্র বলেন, “মিয়ানমার সরকারের নিয়মিত বাহিনী বিজিপির সদস্যদের আশ্রয় দান এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি এক করে দেখা ঠিক হবে না। আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের নিরাপদে দ্রুত প্রত্যাবাসনই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিমান বা নৌরুটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ না বা কোনো পূর্বশর্ত প্রযোজ্য নয়।”
তিনি বলেন, “বিমানযোগে প্রত্যাবাসন দ্রুততম সময়ে করা সম্ভব বিবেচনায় বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দিয়েছিল। কিছুদিন আগে ভারত থেকে বিমানযোগে মিয়ানমারের সৈন্যদের ফেরত দেওয়া হয়েছিল। তাই এ প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ হতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে এ সকল ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসন চায়। এখানে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
“আশা করা যাচ্ছে, অতি দ্রুত তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে, সেটা আকাশপথে হোক বা সমুদ্রপথেই হোক। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন একান্ত জরুরি।”
আরেক প্রশ্নে সেহেলী সাবরীন বলেন, “ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং মিয়ানমারে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার তাদের সেনা ও বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে আগ্রহ ব্যক্ত করছে।
“এখন যত শীঘ্র সম্ভব তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গতকাল বুধবার বিকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। আশা করা যাচ্ছে অতি দ্রুত তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।”