বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন। ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।
Published : 20 Apr 2025, 09:50 PM
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আট আসামির মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতার নাম থাকার কথা বলেছে পুলিশ।
তবে এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি বনানী থানা পুলিশ।
বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে শনিবার বিকালে ‘ছুরিকাঘাতে’ খুন হন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র পারভেজ, যাকে রোববার নিজেদের কর্মী দাবি করেছে ছাত্রদল।
এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানীর কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগও সংবাদ সম্মেলনে করেছে ছাত্র সংগঠনটি।
রোববার সকালে নিহতের চাচাত ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেছেন বলে জানান এ থানার ওসি রাসেল সারোয়ার।
তিনি বলেন, মামলার আসামিদের মধ্যে কয়েকজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। বাকিরা বহিরাগত।
মামলার আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এদের ছাড়াও নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে এজাহারে সোবহান নিয়াজ তুষারের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। হৃদয় মিয়াজীর পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একই ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুষার ও হৃদয়েকে মামলায় আসামি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বনানী থানার ওসি বলেন, “সঠিক, মামলার আট আসামির মধ্যে তাদের নাম রয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
শনিবার বিকালে রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিবাদের জেরে ‘ছুরিকাঘাতে’ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিহত হন।
টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চায়ের দোকানে আড্ডার সময় ছোট্ট একটি ঘটনায় বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে পারভেজকে।
এর আগে রোববার দুপুরে নিহত পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার পাঁচ নেতাসহ বাহিরাগত গ্যাংয়ের সদস্যদের’ দায়ি করে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন। ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের অভিযোগ, “বনানী এলাকার প্রচণ্ড উশৃঙ্খল মেহেরাজ ইসলাম গং বহিরাগতদের ডেকে এনে পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম-সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজী। তাদের সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু সন্ত্রাসী জড়িত ছিল।
“পারভেজকে হত্যার অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধীদের অস্বীকার
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনের পর নিজেদের ফেইসবুক পেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘ছাত্রদল কর্তৃক মিথ্যাচারের জবাব’ শিরোনামের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এতে বলা হয়, “প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীকে দায়ী করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ অন্যান্যরা।
”একজন মৃতব্যক্তির লাশের উপর দাঁড়িয়ে ছাত্রদলের এমন ঘৃণ্য মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সোবহান নিয়াজ তুষার এবং হৃদয় মিয়াজী, পারভেজ হত্যার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালন বলছে, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতার পদঙ্ক অনুসরণ করে ছাত্রদল কর্মীরা যাচাই-বাছাই না করে উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম জড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কেউ একটি প্রমাণও দিতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোনো ব্যক্তির বরাতেও তুষার এবং হৃদয়ের কথা পাওয়া যায়নি।
”বিষয়টি আমাদের ছাত্রলীগের ‘চালাই দেন’ গুজববাহিনীর কথাই মনে করায় আরো একবার। একজন মৃত ব্যক্তির লাশকে ব্যবহার করে ছাত্রদল যে নোংরামি করছে, তা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাম্য নয়।
”কোনো প্রমাণ ছাড়াই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন নেতার নাম জড়িয়ে ফেইসবুকে মব ট্রায়াল চালানোতে তাদের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। একইসঙ্গে পারভেজ হত্যার মূল আসামীরা অনালোচিত থেকে যাচ্ছে। পারভেজ ছাত্রদল কর্মী হলেও ছাত্রদলেরই সাধারণ সম্পাদক হত্যাকারীদের কেনো আড়াল করতে চাইছেন, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। হত্যাকারীদের আড়াল করতে চাওয়ার পিছনে তার অন্য কোনো দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে কিনা, সেটি গোয়েন্দা বাহিনীকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সর্বোপরি, ছাত্রদলকে
অনুরোধ জানাবো স্বীয় দলের কর্মীদের লাশ ব্যবহার করে নোংরামি রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে।“
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের 'কতিপয়ের' আচরণ 'রক্ষীবাহিনীর' মত: ছাত্রদল
ক্যাম্পাসে 'ছুরিকাঘাতে' প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুন