“খুনিদের গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২১ এপ্রিল থেকে পুনরায় বাজার বয়কট কার্যকর হবে।”
Published : 08 Apr 2024, 10:23 AM
সংগঠনের চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার বয়কট কর্মসূচি কয়েকদিনের জন্য স্থগিত করলেও ব্যবসায়ীদের মন থেকে অনিশ্চয়তা দূর হচ্ছে না।
নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদের কথা বিবেচনা করে পানছড়ি বাজার বয়কট কর্মসূচি ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইউপিডিএফ।
এর ফলে বাজারে লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও কিছুটা সচল হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে তারা এটাও বলছেন, ডিসেম্বর থেকে টানা বাজার বয়কটের কারণে অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
২০ তারিখের পর যদি আবার বাজার বয়কট কর্মসূচি আসে তাহলে আবারও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এমন অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারের নৃগোষ্ঠীর এক কৃষিপণ্য বিক্রেতা বলেন, “আমাদের কোনো উপায় নাই। পার্টির কথা না শুনলে অনেক সমস্যা। আমরা অনেকেই এলাকা থেকে কৃষি পণ্য কিনে বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এতে আমাদের সংসার ও জীবিকা নির্বাহ করি।
“বাজার বয়কটে শুধু বাঙালিদের ক্ষতি নয়। আমরা যারা পাহাড়ে বসবাস করি সবাই একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হই। ২০ তারিখের পর কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের দুর্গম অনিল পাড়ায় গুলিতে প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা।
এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করা হলেও তারা তা অস্বীকার করে আসছে।
আরও পড়ুন:
৪ নেতা খুন: পানছড়ি বাজার বর্জনের সময় বাড়াল ইউপিডিএফ
ঘটনার পর হরতাল, সড়ক অবরোধের পাশাপাশি ১২ ডিসেম্বর থেকে পানছড়ি বাজার বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল ইউপিডিএফ। তার বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ বাড়ানো ও সাময়িক সময়ের জন্য বয়কট স্থগিতের ঘোষণাও এসেছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
অনির্দিষ্টকালের বাজার বয়কট চলার মধ্যেই ২৯ মার্চ ইউপিডিএফের পানছড়ি ইউনিটের প্রধান সংগঠক অপু ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানান।
এতে বলা হয়, “বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনের খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পানছড়ি বাজার বয়কট কর্মসূচি চলছে। সামনে পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ উৎসবের কথা বিবেচনা করে এবং বাজার কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পার্টির পক্ষ থেকে আগামী ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পানছড়ি বাজার বয়কট কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
“উক্ত সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২১ এপ্রিল থেকে পুনরায় বাজার বয়কট কার্যকর হবে”, বলা হয় ইউপিডিএফের বিবৃতিতে।
এই ঘোষণা আসার পর পানছড়ি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আপাত স্বস্তি ফিরে আসে। কারণ, এই পরিস্থিতির মধ্যে তারা অন্তত ঈদ ও বৈসাবীর ব্যবসাটা করতে পারবেন।
প্রায় ৪ মাস ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা পানছড়ি বাজারে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, “আঞ্চলিক সংগঠন বাজার বয়কট ঘোষণা দিলে পাহাড়িরা বাজার থেকে কোনো কিছু ক্রয় করে না। প্রয়োজনে তারা ২৫ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি সদর বাজার থেকে সংগ্রহ করে। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।”
বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী কানু সিকদার বলেন, “দোকানে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দিতে হয়। বিশেষ প্রয়োজনেও পাহাড়িরা বয়কটের কারণে মালামাল কিনতে আসে না। বেশি প্রয়োজন পরলে খাগড়াছড়ি থেকে গিয়ে নিয়ে আসে।”
মনতোষ সাহা, রফিকুল ইসলাম, শামীম আহম্মেদ- তিনজনেরই বাজারে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। তাদের ভাষ্য, বাজার বয়কট কর্মসূচি প্রত্যাহাার হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটানো যাবে। ঈদ ও বৈশাবী ঘিরে বেচাকেনা হচ্ছে। নাহলে তো বসে থাকতে হত।
তবে এই তিন ব্যবসায়ীর দাবি, প্রশাসন ও সরকার উদ্যোগ নিয়ে এর একটা স্থায়ী সুরাহা হওয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, “ইউপিডিএফের বাজার বয়কট কর্মসূচি স্থগিত করার আগে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর আর হয়নি।”
আরও পড়ুন:
পানছড়ি বাজার বর্জন স্থগিত করেছে ইউপিডিএফ
ইউপিডিএফের চার নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
৪ ইউপিডিএফ নেতা হত্যা: হরতালের পর সোমবার অবরোধ
খাগড়াছড়িতে ৪ ইউপিডিএফ নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা