Published : 05 May 2025, 07:14 PM
গাজীপুর মহানগরীতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গণপিটুনির পর কারাগারে মসজিদের ইমামের মারা যাওয়ার ছয় দিন পর হত্যা মামলা হয়েছে।
ইমাম রহিজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পরদিন ২৮ এপ্রিল তার স্ত্রী সাজেদা আক্তার গাজীপুর মহানগর পুলিশের পুবাইল থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত অনেককে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দেন।
শনিবার সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। বিষয়টি রোববার রাতে জানাজানি হয়।
পুবাইল থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, মামলার আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ চলছে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রহিজ উদ্দিন চার মাস ধরে ওই মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম দুই মাস বাড়ি থেকে মসজিদে যাতায়াত করতেন। পরে কমিটির লোকজন তাকে মসজিদের তৃতীয় তলায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
জুমার বয়ান নিয়ে এলাকার দুই পক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। এক পক্ষ ইমামকে মসজিদ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করে। আসামিদের মধ্যে একজনের সন্তানকে ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় বলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২৭ এপ্রিল সকালে স্থানীয়রা রহিজ উদ্দিনকে আটক করে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দেয়। এলাকাবাসী তার গলায় জুতার মালা দিয়ে ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
পরে এক কিশোরের বাবা বাদী হয়ে রহিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাতেই আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরদিন ২৮ এপ্রিল গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেছিলেন, “রহিজ উদ্দিনের শরীরে গণপিটুনির চিহ্ন ছিল। রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
এ ঘটনায় বিচার দাবি করে তার পরিবার। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভও হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রোব ও সোমবার ইমাম রহিজ উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ।
রহিজ উদ্দিন চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় পরিবারসহ বাসা ভাড়া নিয়ে থেকে পুবাইল থানার হায়দরাবাদ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করতেন।
এদিকে, ইমাম হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার বিকালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের উদ্যোগে শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী সড়কের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য দেন আলোচিত ইসলামি বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আ ন ম মাসুদ হোসেন আল কাদেরী, গাজীপুর জেলা সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়াল কাদেরী।
বক্তারা বলেন, অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে রইজ উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন:
গাজীপুরে ছাত্রকে 'ধর্ষণের' অভিযোগে গণপিটুনির শিকার ইমামের মৃত্যু