কলমতেজি টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে; কিন্তু নতুন করে জ্বলছে দুই কিলোমিটার দূরের তেইশের ছিলার শাপলার বিল।
Published : 23 Mar 2025, 09:13 PM
সুন্দরবনের এক স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই আরেক স্থানে অগ্নিকাণ্ড দেখা দিয়েছে। নতুন আগুনের উৎসস্থল থেকে পানি বেশ দূরে। ফলে ‘ফায়ার লাইন’ কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।
শনিবার দুপুরের পর থেকেই পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুন দেখতে পায় বনবিভাগ। তখন থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস।
রোববার দুপুর ১টার দিকে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলমতেজি টহল ফাঁড়ি থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে দুই কিলোমিটার দূরে তেইশের ছিলার শাপলার বিল এলাকা নতুন করে আগুন দেখা দেয়।
দুপুর থেকে বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছে আগুনের বিস্তৃতি ঠেকাতে ‘ফায়ার লাইন’ কাটার (মাটি কেটে বিচ্ছিন্ন করা) কাজ শুরু করেছে। তবে এই স্থানে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হল তা জানাতে পারেনি বনবিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম সন্ধ্যায় বলেন, “ড্রোন ও জিপিআরএস ট্রাকিং এর মাধ্যমে শাপলার বিলে আগুন দেখে সেখানে ছুটে যান বনকর্মীরা। গিয়ে দেখি, কোথাও কোথাও দাউদাউ করে জ্বলছে, আবার কোথাও কোথাও ধোঁয়ার কুণ্ডুলি উড়ছে।
“এখানকার আগুনের তীব্রতা বেশি, বনের মধ্যে হালকা বাতাস থাকায় আগুন ছড়াচ্ছে বেশি। স্থানীয় গ্রামবাসী ও বনকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আগুনের বিস্তৃতি ঠেকাতে ‘ফায়ার লাইন’ কাটার কাজ শুরু করা হয়েছে।”
আগুনের তীব্রতার ব্যাপারে একই মত দেন ফায়ার সার্ভিসের খুলনার উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, “বাগেরহাট ও খুলনার ছয়টি ইউনিট শনিবার থেকে আগুন নেভানোর কাজ করছে। শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছেছি। পানির উৎস তিন কিলোমিটার দূরে হওয়ায় আমরা এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি।”
সরজমিনে দেখা গেছে, আগুন লাগার স্থানটি সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর গ্রামের বিপরীতে। এই গ্রামের মানুষ মরা ভোলা নদীটি পার হয়ে সুন্দরবনের ভেতরে অবাধে প্রবেশ করে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে নদীটিতে পানি থাকে অনেক কম। ফলে শীতে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত বাড়ে। তারা গরু-ছাগল নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করে।
ধানসাগর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, বনের ভেতরে ঢুকে তারা শুকিয়ে যাওয়া কাঠ-পাতা সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ গরু-ছাগল নিয়ে যান।
তারা নদীটি খননের দাবি জানিয়ে বলেন, তাহলে হয়ত কেউ সুন্দরবনে অবাধে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বনের ভেতরেও জোয়ারের পানি ঢুকতে পারবে। প্রয়োজনে বনের ভেতরে কিছু পুকুর খনন করতে হবে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘ফায়ার লাইন’ কাটার পর পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে। একটার মধ্যে আরেকটা দুর্ঘটনা বনবিভাগকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি জানিয়ে বন কর্মকর্তা বলেন, আগুনের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক দীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের গহীনে আগুন, পানির উৎস '৩ কিলোমিটার দূরে'
সুন্দরবনে আগুন: রাতের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণের আভাস বন বিভাগের
সুন্দরবনে আগুন: সেচপাম্প দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে বনবিভাগ, তদন্তে কমিটি